সাতক্ষীরায় তাণ্ডব চালিয়ে মোংলা-বাগেরহাটের দিকে বুলবুল

বুলবুলের প্রভাবে ঝড়ো বাতাসপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ রবিবার (১০ নভেম্বর) সাতক্ষীরা অতিক্রম করে মোংলা-বাগেরহাটের দিকে অগ্রসর হয়েছে। ঝড়ের তীব্রতা কিছুটা কমলেও এখনও ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তারা জানায়, ৮১ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানা ঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরায় শনিবার (৯ নভেম্বর) রাত ৩টা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ প্রচণ্ড বর্ষণ শুরু হয়। মূল ঝড়টি আঘাত হানে রবিবার ভোর ৫টায়। নদীর পানি বেড়ে শ্যামনগরের সুন্দরবন লাগোয়া এলাকার রাস্তা-ঘাট প্লাবিত হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেশকিছু ঘরবাড়ি ভেঙেছে। ঝড়ের তাণ্ডবে এসব এলাকায় উপড়ে পড়েছে গাছপালা।

বুলবুলের তাণ্ডব

সাতক্ষীরার প্রতিনিধি শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, ঝড়ের আঘাতে কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ের পশ্চাৎ ভাগ এখন সাতক্ষীরায় অবস্থান করছে। আর অগ্রভাগ মোংলা ও বাগেরহাটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৪৭ মিলিলিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঝড়ের কারণে রাস্তায় গাছপালা ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। সেগুলো সরাতে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে। এছাড়া মোবাইল নেটওয়ার্কও ঠিকমতো কাজ করছে না। 

খুলনায় ঝড়ের তীব্র গতির বাতাসে লণ্ডভণ্ড সাইনবোর্ডদাকোপ উপজেলা পরিষদের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আব্দুল কাদের বলেন, ‘দাকোপে রাত ১টার দিকে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া শুরু হয়। ভোরের দিকে এর পরিমাণ বেড়ে যায়। এখনও তা চলমান আছে। এতে দাকোপ উপজেলা পরিষদের তেঁতুল গাছটি পড়ে গেছে। উপজেলা জুড়ে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।’

আমাদের খুলনা প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর আঘাতে খুলনা সদরে গাছপালা ও ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। 

খুলনার কয়রা উপজেলা পরিষদের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাফর রানা বলেন, ‘মূল ঝড়ের আঘাত ভোররাত সাড়ে চারটা থেকে শুরু হয়েছে, সেটি এখনও চলমান। এতে কয়রা উপজেলার অনেক ঘরবাড়ি ভেঙেছে, গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এছাড়া জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই ফুট বেশি রয়েছে।’

আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আরও সামান্য উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে রবিবার ভোর ৫টায় সুন্দরবনের কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল অতিক্রম করেছে এবং বর্তমানে খুলনা ও দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলে (২২.০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.৪ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আকারে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ক্রমশ দুর্বল হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় এর প্রভাবে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

বুলবুলের প্রভাবে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল

মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একই সংকেতে দেখাতে বলা হয়েছে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের ক্ষেত্রে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

বুলবুলের তাণ্ডব

ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৮০-১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড় ও মুন ফেজ এর প্রভাবে এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন:

ভোরে উপকূল অতিক্রম করেছে বুলবুল

আশ্রয়কেন্দ্রে উপকূলবাসী

উপকূলে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত

 

যে কারণে এবারও ৯১ সালের মতো ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা

সুন্দরবন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে ‘বুলবুল’

‘বুলবুল’ মোকাবিলায় সরকার ও দল সর্বোচ্চ প্রস্তুত: ওবায়দুল কাদের

আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন উপকূলবাসী

‘বুলবুল’ মোকাবিলায় সাতক্ষীরায় সেনা মোতায়েন

স্বাস্থ্য বিভাগের ছুটি বাতিল, দুর্যোগ মোকাবিলায় ৮ নির্দেশনা

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় প্রস্তুত সরকার: নৌ প্রতিমন্ত্রী

দুর্গতদের যেকোনও প্রয়োজনে ৯৯৯-এ কল করার অনুরোধ

 সারাদেশে নৌ চলাচল বন্ধ

উপকূলে ৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা

১৩ জেলার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল