‘ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারেননি অজয় রায়, এটা আমাদের দুর্ভাগ্য’

 

 

অধ্যাপক অজয় রায়একুশে পদকপ্রাপ্ত পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক অজয় রায়ের মৃত্যুতে বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা শোক প্রকাশ করেছেন। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) তার মৃত্যুর খবর পেয়ে অনেকেই ছুটে আসেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালে। এ সময় হাসপাতালে উপস্থিত ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বিলম্বের কারণে ছেলে অভিজিৎ রায়ের হত্যার বিচার দেখে যেতে পারেননি বাবা অজয় রায়। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।’

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরশাহরিয়ার কবির আরও বলেন, ‘তার জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত ছিল ছেলের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। ২০১৬ সালের ওই ঘটনার শোক তিনি সামলাতে পারেননি। তারপর থেকেই শরীর ভেঙে গেছে। তিনি শারীরিকভাবে মৃত্যুবরণ করলেও চেতনাগতভাবে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন।’

তিনি জানান, দীর্ঘদিন অজয় রায় পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার নির্বাচক কমিটির সদস্য ছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে নাগরিক আন্দোলনে ১৯৯২ সাল থেকে যুক্ত ও সক্রিয় ছিলেন। মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।

নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুহাসপাতালে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘অজয় রায়ের মতো ধীমান মানুষ সচরাচর দেখা যায় না। তিনি আমাদের জন্য পথ তৈরি করেছিলেন। তার মতো মানুষের চলে যাওয়া আমাদের আগামী দিনগুলোকে সংকটাপন্ন করে তুলবে। ষাটের দশক থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের সময় পর্যন্ত তিনি আমাদের সংগ্রামে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে তিনি সবাইকে নিয়ে পথ চলেছেন। তার বিশ্বাসে অবিচল থাকায় সন্তান অভিজিৎ রায় জীবন পর্যন্ত দিয়েছেন।’

অধ্যাপক অজয় রায়ের মৃত্যুতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিব শোক প্রকাশ করেছেন। সিনিয়র তথ্য অফিসার ফয়সল হাসানের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ জানান, মুক্তিযোদ্ধা অজয় রায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল মহান ভাষা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানেও।

আরেক শোকবার্তায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করেন।

শোক প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। এক শোকবার্তায় মন্ত্রী শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

শোক প্রকাশ করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। এক শোকবার্তায় তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় অবদানের জন্য বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে অনেকদিন স্মরণ করবেন।

প্রসঙ্গত,অধ্যাপক অজয় রায় বার্ধক্যজনিত সমস্যা, নিউমোনিয়া ও ব্রংকাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ২৫ নভেম্বর বারডেম জেনারেল হসপিটালে ভর্তি হন। তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অজয় রায়ের মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন: 

অধ্যাপক অজয় রায় আর নেই

অজয় রায়ের শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী মরদেহ দান করা হবে