তবে পাম্প মালিকদের কেউ কেউ বলছেন, গাড়িচালক ও মালিকদের ‘অসহযোগিতা’র কারণে তারা আদালতের নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারছেন না। তবে কাগজপত্র ছাড়া জ্বালানি সরবরাহ না করার যে নির্দেশনা রয়েছে, আপাতত তারা জানিয়ে দিচ্ছেন। অন্যদের দাবি, তারা আদালতের আদেশ পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করছেন। এ কারণে আগের চেয়ে জ্বালানি বিক্রি অনেক কমে গেছে।
কমলাপুরের শান্তা সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশনে মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, কিছু গাড়িতে জ্বালানি সরবরাহের সময় চালকের কাছে কাগজপত্র চাওয়া হচ্ছে। কয়েকটিকে আবার কাগজপত্র ছাড়াই তেল দেওয়া হলো। স্টেশনটির পাশে আদালতের আদেশ-সংবলিত একটি ব্যানার ঝুলছে।
জানতে চাইলে পাম্পের সহকারী ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মো. আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কোনও গাড়িতে কাগজপত্র না দেখে জ্বালানি দিই না। এ কারণে আমাদের বিক্রি অনেক কমে গেছে।’
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘অনেক কাগজপত্রবিহীন গাড়ির মালিক ও চালক ফোন করেন তেল দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমরা দিচ্ছি না।’
তা সত্ত্বেও সেসব গাড়ি বন্ধ হয়নি মন্তব্য করেন তিনি বলেন, ‘ঢাকায় জ্বালানি না পেলে ঢাকার বাইরে থেকে নিচ্ছে। মাঝপথে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা।’
এই পাম্প কর্মকর্তা বলেন, বিশেষ করে সরকারি গাড়ির কাগজপত্র আপডেট থাকে না। তারা তেলের জন্য আসলে পাম্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বেশি ঝগড়া হয়। অনেক সময় ধমক দেয়। পুলিশ এসে মাঝে-মধ্যে চেক করে আদেশ পালন করা হচ্ছে কি হচ্ছে না, তা দেখে যান বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে পেট্রোল পাম্পটির মালিক আব্দুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোর্টের আদেশের বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা সেটা চালক ও মালিকদের জানিয়ে দিচ্ছি। এখন যদি আমরা সেই আদেশ পুরোপুরিভাবে পালন করতে যাই তাহলে পাম্পের সামনে দীর্ঘ লাইন হয়ে যাবে। আমরা চালকদের জানিয়ে দিচ্ছি, ফিটনেসবিহীন গাড়িতে জ্বালানি দেওয়া হবে না। তারা সচেতন হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাড়ির কাগজপত্র দেখার দায়িত্বতো আমাদের না। কোনটা গাড়ির কোন কাগজ সেটা তো আমরা বুঝি না। মানুষও মাইন্ড করে। আমাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা করে। আমরা কী করবো?’
একই চিত্র দেখা গেছে রমনা ফিলিং স্টেশনেও। জ্বালানি সরবরাহের সময় কোনও গাড়ির কাগজপত্র দেখা হচ্ছে না। এ বিষয়ে পেট্রোল পাম্পটির কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।
মিডওয়ে পরিবহনের চালক আফছার উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কয়েকটি পাম্পে ফিটনেসবিহীন গাড়িতে জ্বালানি না দিতে নির্দেশ-সংবলিত সাইনবোর্ড দেখেছি। আবার অনেক পাম্পে নেই। যেখানে কোর্টের আদেশ লেখা আছে সেখানেও কাগজপত্র দেখা হচ্ছে না। যখন মন চায় তখন পাম্পের লোকজন একটু কথাবার্তা বলে।’ কোথাও এখন পর্যন্ত কাগজ দেখাতে হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তবে কাগজপত্র ছাড়া যে জ্বালানি দিতে নিষেধ রয়েছে, সেটা জানতে পেরেছি।’
গত মাসে পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) দেশের সব পেট্রোল পাম্পকে ফিটনেসবিহীন যানবাহনে জ্বালানি সরবরাহ না করতে চিঠি দিয়েছে। এ ছাড়া ২ নভেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকেও একই কথা জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে রাজধানীর সব পেট্রোল পাম্পকে।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ মার্চ ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে ‘নো ফিটনেস ডকস, ইয়েট রানিং’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গত ২৭ মার্চ রুল জারি করেন উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে ঢাকাসহ সারাদেশে ফিটনেসবিহীন ও নিবন্ধনহীন যানবাহনসহ লাইসেন্সহীন চালকের তথ্য প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। রুলে ফিটনেস ও নিবন্ধনবিহীন যান চলাচল ও লাইসেন্স ছাড়া যান চলাচল বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জীবন ও ব্যক্তির বাঁচার অধিকার রক্ষায় মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর বিধান বাস্তবায়নের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তাও জানতে চান আদালত। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ প্রধান, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান, ঢাকা ট্রাফিক পুলিশের (উত্তর ও দক্ষিণ) ডিসি, বিআরটিএ সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।