রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা

আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়াতে সরকারের পরিকল্পনা

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যা ইস্যুতে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনরোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় আরও বেশি আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এখন পর্যন্ত ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) ৫৭টি সদস্য দেশ, কানাডা ও নেদারল্যান্ডস প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে সমর্থন দিয়েছে। এর পরিধি আরও বিস্তৃত করার জন্য সরকার কূটনৈতিক যোগাযোগ আরও বাড়াবে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “গণহত্যার শুনানিতে গাম্বিয়া সুন্দরভাবে মামলাটি উপস্থাপন করেছে। আমরা আশা করছি, যে কয়েকটি বিষয়ের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চাওয়া হয়েছে তার সবক’টি না হলেও অধিকাংশ বিষয়ে আদালত একমত হবেন।”
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি এক মাসের মধ্যে আদালত একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেবেন এবং প্রথা অনুযায়ী তার এক থেকে দুই মাসের মধ্যে মূল মামলা শুরু হবে।’

মামলা কতদিন চলতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত এ ধরনের মামলা চলে থাকে, কিন্তু এক্ষেত্রে কম সময় লাগতে পারে।’

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও উদ্বুদ্ধ করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘সব দেশের সমর্থন চাইতে হবে। ইতোমধ্যে অনেকে আমাদের সমর্থন দিয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এশিয়া ও অন্যান্য মহাদেশের সবাই রোহিঙ্গা নির্যাতনের নিন্দা করেছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি’র মামলা বাতিলের অনুরোধকে ‘পাবলিসিটি স্টান্ট’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘এই আদালতের রায় মিয়ানমারের জন্য বাধ্যতামূলক।’

জাতিসংঘ এ বিষয়ে সম্পৃক্ত হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের সম্পৃক্ততার সুযোগ নেই। কিন্তু মিয়ানমার যদি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ মানতে না চায় তবে নিরাপত্তা পরিষদ এর সঙ্গে জড়িত হবে।’

গত ১১ নভেম্বর গাম্বিয়া গণহত্যার অভিযোগ আনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। যেহেতু এ ধরনের মামলা অনেক দিন ধরে চলে সেজন্য গাম্বিয়া একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চায় আদালতের কাছে। সেটির শুনানি অনুষ্ঠিত হলো ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর।

গাম্বিয়া কয়েকটি বিষয়ের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়েছে। সেগুলো হচ্ছে– গণহত্যা বন্ধের জন্য মিয়ানমার অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবে; মিলিটারি, প্যারামিলিটারি ও বেসামরিক অস্ত্রধারী ব্যক্তি যাতে কোনও ধরনের গণহত্যা সংঘটিত না করে সে ব্যবস্থা নেওয়া; মিয়ানমার গণহত্যা সংক্রান্ত কোনও ধরনের প্রমাণ নষ্ট করবে না; এবং বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও বেশি জটিল ও খারাপ করে এমন কোনও কাজ করবে না।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার গণহত্যার উদ্দেশ্যে আনীত অভিযোগকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ।

১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর হেগে আদালতের শুনানিতে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের নেতৃত্বে অংশ নেয়। দলটি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষার জন্য বাংলাদেশ কী কী করেছে সে বিষয়ে এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে অবহিত করে। টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরির সঙ্গে দায়বদ্ধতার একটি যোগাযোগের ওপর জোর দেয় প্রতিনিধি দলটি।

হেগে অবস্থানকালে শহীদুল হক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া একাধিক আন্তর্জাতিক এনজিও আয়োজিত ‘রাইট টু রিপ্লাই’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় শহীদুল হক বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের প্রতি সহমর্মিতাশীল। কারণ, তিনি তার জীবনে দুইবার উদ্বাস্তু হয়েছিলেন।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ বিন মোমেন, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মাদ মাহফুজুর রহমান, অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিয়ুর রহমান, ইরানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গওসুল আজম, নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মোহাম্মাদ বেলালসহ অনেক কর্মকর্তা প্রতিনিধি দলে ছিলেন।