মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে এ বিষয়ে একটি পৃথক প্রকল্প একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদন করেছে। ‘আশ্রায়ণ-৩ প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৯৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে— নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার চর ঈশ্বর ইউনিয়নের ভাসানচর একটি দ্বীপ। দ্বীপটি নোয়াখালী থেকে প্রায় ২১ নটিক্যাল মাইল, জাহাজির চর থেকে ১১ নটিক্যাল মাইল, সন্দ্বীপ থেকে ৪ দশমিক ২ নটিক্যাল মাইল, পতেঙ্গা পয়েন্ট থেকে ২৮ নটিক্যাল মাইল এবং হাতিয়া থেকে ১৩ দশমিক ২ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে অবস্থিত। প্রকল্পটি সংশোধিত অননুমোদিত প্রকল্প হিসেবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এডিপি’র চলতি প্রকল্প তালিকায় টোকেন অ্যালোকেশন দিয়ে অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ৬৮০ রানিং মিটার শোর প্রোটেকশন ওয়ার্ক নির্মাণ করা হবে। ভাসানচরকে বন্যা জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করতে ৫৮ লাখ ৯০ হাজার ঘন মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। বসবাসের জন্য এক হাজার ৪৪০টি ব্যারাক হাউজ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া, এই চরে ১১১টি শেল্টার স্টেশন ও ৯টি মডিফায়েড শেল্টার স্টেশন থাকবে।
প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের দেখভালের জন্য আসা জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের জন্য একটি চার তলা ভবন এবং প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি চার তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। সেখানে বসবাসকারী বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দুটি হাসপাতাল ও চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হবে। থাকবে মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মাবলস্বীদের জন্য উপাসনালয়। দ্বীপটির নিরাপত্তার জন্য নৌবাহিনীর অফিস ভবন ও বাস ভবন নির্মাণ করা হবে। থাকবে অভ্যন্তরীণ সড়ক ও পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো, নলকূপ ও পানি সরবরাহের অবকাঠামো। আরও নির্মাণ করা হবে পেরিমিটার ফেন্সিং ও ওয়াচ টাওয়ার। দ্বীপের চার পাশের নৌপথে পাহারা দেওয়ার জন্য আটটি হাই স্পিড বোট কেনা হবে। বিভিন্ন জরুরি সময়ে প্রয়োজনীয় পণ্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ করা হবে। দ্বীপে থাকবে জ্বালানি ট্যাংক। জরুরি বা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে, বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এ দ্বীপে যাতায়াত সহজ করতে হেলিপ্যাড নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আরও থাকবে চ্যানেল মার্কিং ও মুরিং বয়া, বোট ল্যান্ডিং সাইট, মোবাইল টাওয়ার, রাডার স্টেশন, সিসি টিভি, সোলার প্যানেল, জেনারেটর ও বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন।
প্রকল্প সম্পর্কে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নোটে বলা হয়েছে— প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভাসানচরে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত একলাখ নাগরিকের আশ্রয় প্রদান করা হবে। মিয়ানমারের এই নাগরিকরা নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পর এই এলাকায় বাংলাদেশের ভূমিহীন দরিদ্র নাগরিকদের পুনর্বাসন করা হবে। এ কারণেই প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী নিজে দেশে ফিরে যাওয়ার পর আলোচ্য প্রকল্প এলাকায় বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন করা হবে, যা বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে অবদান রাখবে। এ বিবেচনায় সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং এসডিজি’র উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বিধায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়।