কওমি মাদ্রাসার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের সাধারণ শিক্ষাও দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ের পাঁচটি ক্লাসেই আরবি-উর্দু পাঠ্যসূচির সঙ্গে বেফাক প্রকাশিত বাংলা, ইংরেজি, গণিত বিষয়গুলো পড়ানো হয়। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর শিক্ষকরা বলছেন, সাধারণ বিষয়ের ওপর যে বইগুলো আছে, এতে আরও পরিবর্তন আনা জরুরি।
কোনও কোনও আলেম বলছেন, কওমি মাদ্রাসায় কোচিংয়ের কোনও সুযোগ নেই এবং প্রয়োজনও পড়ে না। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসে নিজে নিজে পড়েই সিলেবাস শেষ করে। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে আল-হাইআতুল উলয়া লি-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায়। গত বছর পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হয়। যদিও কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
বেফাকের গত বছরের একটি হিসাবে দেখা গেছে, সারাদেশে মোট কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ১১ হাজার ৭৫৮টি। বিভাগওয়ারি ঢাকায় ৪৫১৬টি, ময়মনসিংহে ২০৫৪, সিলেটে ১০৬১, চট্টগ্রামে ১৯১৭, খুলনায় ৯০৬, রাজশাহীতে ৪৭৮, বরিশালে ৪৮৬, রংপুরে ৩৪০টি। তবে উচ্চশিক্ষা আছে—এমন মাদ্রাসার সংখ্যা অনেক কম। দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা দিতে সরকারি আল হাইয়ার অধীনে গত বছর নিবন্ধিত হয়েছে ১২৪৫টি মাদ্রাসা। ২০১৭ সালে ছয়টি আঞ্চলিক বোর্ডের ৮৩৫টি মাদ্রাসা অংশ নেয় হাইয়ার পরীক্ষায়। ২০১৮ সালে ১০৩৮টি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আল হাইআ’তুল উলয়া’র পরীক্ষায় অংশ নেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. সৈয়দ শাহ এমরান জানান, ২০১৫ সালে করা তার একটি গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে দেশের ৬৪ জেলার ৫২১টি উপজেলায় কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ৪ হাজার ৫৮৫টি এবং হেফজ মাদ্রাসার সংখ্যা ১২ হাজার ৬৬৭টি। আর এসব প্রতিষ্ঠানেই সর্বনিম্ন প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্ত আবাসিক-অনাবাসিক ছাত্র রয়েছে।
আলেমরা বলছেন, কওমি মাদ্রাসার আয়ের বড় খাতই হচ্ছে অনুদান। সাধারণ মানুষের অনুদানের ওপর নির্ভর করেই প্রতিষ্ঠানগুলো সব ব্যয় নির্বাহ করে থাকে। শহরে ও গ্রামের মাদ্রাসার শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহর অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত কওমি মাদ্রাসাগুলোতে প্রায় তিন বেলা খাবার দেওয়া হয়। প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই অন্তত অর্ধেক শিক্ষার্থী বিনামূল্যে খাবার ও শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে।
চট্টগ্রামে আল্লামা আহমদ শফীর পরিচালনাধীন দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় প্রায় সাড়ে ৯ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে বলে জানা গেছে প্রতিষ্ঠানের দফতরের একটি সূত্রে। এরমধ্যে, ৪ হাজার ৩শ’ ছাত্র লিল্লাহ বোর্ডিং থেকে বিনামূল্যে খাবার পেয়ে থাকে।
ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে সাড়ে তিন হাজারের মধ্যে ১৬-১৭শ’ ছাত্র আছে, যারা বিনামূল্যে খাবার খেতে পারে এবং পড়াশোনা করে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দারুল আরকাম মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা সাইফুল্লাহ জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে তিন বেলা খাবার যারা খায়, তাদের ১৪-১৫শ’ টাকা দিতে হয়। আর যারা দুবেলা খাবার খায়, তাদের ৯শ’ করে টাকা দিতে হয়। একেবারে ফ্রি-তে খাবার পায়, এমন অনেক শিক্ষার্থী দারুল আরকামে আছে বলেও জানান সাইফুল্লাহ।
জামিয়া হোসাইনিয়া আরজাবাদ মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা জুলকারনাইন বিন আজাদ জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে মোট ছাত্রসংখ্যা ১২৩৯ জন। এরমধ্যে ৭১২ জন বিনামূল্যে খাবারের সুযোগ পাচ্ছে। এই ফ্রি শিক্ষার্থীদের ব্যয় ভার প্রতিষ্ঠানের ‘গোরাবা’ (জাকাত-ফেতরা-সদকা-মান্নত-কোরবানির চামড়ার মূল্য) খাত থেকে দেওয়া হয়। এর বাইরে প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ের একটি বড় প্রাপ্তি আসে সাধারণ মানুষের অনুদান, ভর্তি ফি, ওয়াজ-মাহফিল থেকে।
অন্যদিকে, গ্রাম বা মফস্বলের কওমি মাদ্রাসায় লজিং পদ্ধতি এখনও থাকলেও তা খানিকটা কমে গেছে বলে জানান সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মদিনাতুল উলুম হজরত শাহমালুম (রহ.)পশ্চিম বাজার মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা ফখরুল ইসলাম।
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের শিক্ষক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসা কতজন শিক্ষার্থীকে খাওয়ায় ও পড়ায় তার সঠিক কোনও পরিসংখ্যান আমার জানা নেই। সাধারণত, বিনামূল্যে শিক্ষার বিষয়টি আমাদের দেশের পুরনো ঐতিহ্য। ছাত্ররা বেতন দিয়ে পড়ে, এটা অভূতপূর্ব ব্যাপার ছিল। ছাত্র হওয়া মানেই তো একটা কাজ।’
‘এখন তার খরচ কে বহন করবে? হয়তো তার পরিবার যেভাবে আমরা করি বা রাষ্ট্র। না হলে সমাজ বহন করবে।’ বলেন সলিমুল্লাহ খান। তিনি আরও বলেন, ‘এ কারণে মনে হয়, কওমি মাদ্রাসাগুলো চিরাচরিত একটি নিয়ম অনুসরণ করছে। প্রাচীনকালে ছাত্ররা গুরুর বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতো। গুরু ছাত্রদের খাবারের ব্যবস্থা করতো, এখন তো গুরু নেই, বিদ্যালয় আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সমাজের গণ্যমান্য বক্তিরা দান করেন। বিদেশি কোনও সংস্থা দেয় কিনা, তা অনুসন্ধানের ব্যাপার।’
মাদ্রাসায় কী খাচ্ছে ছাত্ররা
রাজধানীর পরিচিত ও অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম একটি কওমি মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির (মিজান জামাত) একজন শিক্ষার্থী বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, সে সেখানে সাত বছর ধরে পড়াশোনা করছে। প্রাকশিশু শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে বর্তমানে সে মিজান জামাতে পড়ছে। সে মাদ্রাসার সাধারণ পর্যায়ের খাবার গ্রহণ করে থাকে। গত ৯ জানুয়ারি বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে মাদ্রাসার সপ্তাহের সাত দিনের একটি বিবরণ দেয় ষষ্ঠ শ্রেণির এই শিক্ষার্থী। সে জানায়, তার শিক্ষালয়ে সে ফ্রি খাবার পায়। তবে তাকে পরীক্ষার ফি দিতে হয়, যা সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত। বছরে তিনটি পরীক্ষা হয় তার প্রতিষ্ঠানে। তিনবেলা খাবারের বিষয়ে এই শিক্ষার্থী মন্তব্য—সকালে নাস্তার ক্ষেত্রে শনিবার আলু ভর্তা, রবিবার মুরগির খিচুরি, সোমবার রুটি ও ভাজি বা ডাল, মঙ্গলবার তেহারি, বুধবার আলু ভর্তা, বৃহস্পতিবার খিচুরি ও শুক্রবার তেহারি দেওয়া হয়।
দুপুরের খাবারের জন্য সাধারণ পর্যায়ের ছাত্রদের দিতে হয় মাসে ১৩শ’ টাকা করে। আর কিতাব বিভাগের সব ছাত্রকে ২১শ’ টাকা দিতে হয় বিশেষ ধরনের খাবার গ্রহণ করলে। এই বিশেষ ধরন সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য—স্বাদ একটু ভালো হয় খাবারের। হেফজ ও মক্তব বিভাগের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দিতে হয় বিশেষ খাবারের জন্য দুই হাজার টাকা। সাধারণ পর্যায়ে যে খাবার দেওয়া হয়, সেগুলোর মধ্যে প্রতি সপ্তাহে লাবরা, মুরগি, পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ, ডিম দেওয়া হয়। কিতাব বিভাগে অধিকাংশ দিন সবজির লাবরা দেওয়া হয়। সপ্তাহে দুদিন মাছ থাকে। প্রত্যেক রাতে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা পায় ভাজি, আলু ভর্তা ও ডাল। মাঝেমধ্যে কোনও দাওয়াত থাকলে গরুর মাংস খাওয়ার সুযোগ হয়, বলে জানান তিনি।
এই তিনবেলা খাবারের বাইরে ছাত্ররা বাড়ি থেকে আনা চিড়া, মুড়ি, খেজুর নিজেদের ট্রাংকে রেখে ক্ষুধা মেটায়।
তবে রাজধানীর কিছু মাদ্রাসার ‘বিশেষ খাবার’ অনেক ভালো হয়ে থাকে এবং এতে আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারের সন্তানেরাই কেবল খেতে পারে, বলে জানান যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার একজন শিক্ষক।
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার দারুল উলুম ইসলামিয়া হরষপুর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামের মাদ্রাসার ছাত্ররা লজিং থাকে। সেখানে মানুষ নিজেরা যা খায়, মাদ্রাসার ছাত্রদেরও তাই খেতে দেয়। নিত্যদিন নতুন তরকারি, গ্রামীণ স্বাদ তো বেশিই পায় ছাত্ররা। আবার কোনও মাদ্রাসায় ছোট পরিসরে বোর্ডিং রয়েছে।’
মাওলানা সিরাজুল ইসলাম জানান, এখনও স্থানীয় এলাকাবাসী মাদ্রাসার ছাত্রদের লজিং রাখে এবং মাদ্রাসায় ৫০ জনের বোর্ডিংয়ে নিয়মিত চাল-ডাল অনুদানও আসে।
‘১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা পড়াশোনা’
রাজধানীর আজিমপুর এলাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী জানান, ফজরের নামাজের পর থেকে সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত মাদ্রাসার নিয়মেই থাকতে হয়। ঘুম থেকে ফজরের নামাজের পর কোরআন তেলাওয়াত, ক্লাসের পড়াশোনা ও নাস্তা করে ৯টা নাগাদ ক্লাস শুরু হয়। এরপর জোহরের নামাজের সময় ও দুপুরের খাবারের বিরতি দিয়ে ফের দুপুর আড়াই থেকে তিনটা নাগাদ ক্লাস।
তিনি জানান, আছরের নামাজের বিরতির পর মাগরিবের নামাজের আগ পর্যন্ত নিজেদের মতো সময় কাটাতে পারে ছাত্ররা। কেউ আশেপাশে বাবা-মা থাকলে দেখা করে, কেউ মাদ্রাসার ক্লাসরুমে বসে বই পড়ে, কেউ-কেউ সুযোগ পেলে ছাদে বা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে খেলাধুলা করে।
গ্রামের মাদ্রাসার শিশুরা খেলাধুলা করার অবারিত সুযোগ পায়, এক্ষেত্রে শহরের শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে—এমন কথা জানান বাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার একটি মাদ্রাসার একজন শিক্ষক।
জামিয়া রাহমানিয়ার একজন শিশু ছাত্র জানায়, তারা অন্তত ১৪ ঘণ্টা পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকে।
ঢাকার রামপুরার জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুমের প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহিউদ্দিন ইকরাম বলেন, ‘তার প্রতিষ্ঠানে রিকশাওয়ালা, গার্মেন্টস শ্রমিক, চা দোকানির সন্তানেরাও পড়াশোনা করে। আবাসিক-অনাবাসিক মিলিয়ে আড়াইশ’ শিক্ষার্থী আছে। তার প্রতিষ্ঠানে সব ক্লাসের ছাত্ররাই ক্লাস ও ব্যক্তিগত মিলিয়ে প্রায় ১৬-১৭ ঘণ্টা পড়াশোনা করে।’
প্রাথমিকের ছয়টি ক্লাসে যা পড়ানো হয়
বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে পৃথক-পৃথক শিক্ষা থাকলেও পাঠ্যবইয়ের বাছাইয়ে সবচেয়ে বড় বোর্ড বেফাকের প্রকাশনাগুলোই সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য। কওমির শিশু শ্রেণিতে পাঁচটি বিষয়ে পড়ানো হয়। এগুলো হলো—ইসলামি তাহযিব, আরবি বর্ণমালা শিক্ষা, বাংলা আদর্শ শিশু শিক্ষা, গণিতে আদর্শ ধারাপাত ও ইংরেজি বিষয়ে ইংরেজি বর্ণমালা শিক্ষা।
দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠসূচিতে রয়েছে আটটি বিষয়। কোরআন শরিফ নাজেরা (দেখে পাঠ শিক্ষা), তালিমুল ইসলাম ও ইসলামি তাহযিব, আদর্শ বাংলা পাঠ (দ্বিতীয় শ্রেণি), প্রাথমিক গণিত (দ্বিতীয় খণ্ড), ভূগোল ও সমাজ পরিচিতি (দ্বিতীয় শ্রেণি), উর্দু, আরবি ওয়ার্ড বুক ও মাই ইংলিশ বুক (পার্ট টু)।
রাজধানীর বড় কাটারা মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল আহাদ। তিনি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বাংলা ও ইংরেজি ক্লাস নেন। প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বাংলা ও অংক বইগুলোতে মৌলিক কিছু বিষয় রয়েছে বলে জানান তিনি। আব্দুল আহাদ বলেন, ‘বইগুলোতে সবকিছু টাচ করা হয়েছে। মূলত মাদ্রাসায় ধর্মীয় শিক্ষাটাই প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে প্রাথমিক স্তরের সঙ্গে মান বজায় রাখতে গেলে পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। এটি করতে হলে মাদ্রাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উদ্যোগ প্রয়োজন। তাহলে মান বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।’
ছাত্ররা কেমন বেতন দেয়?
প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বেতন নিয়ে আজিমপুর ফয়জুল উলুম মাদ্রাসার একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, ছাত্রদের কাছ থেকে কোনও বেতন নেওয়া হয় না। বিদ্যুৎ ফি ও সার্ভিস ফি বাবদ ১৫০ টাকা করে প্রতিমাসে আদায় করা হয়।
সিলেটের গোয়াইনঘাট এলাকার একটি মাদ্রাসার একজন প্রিন্সিপাল জানান, তার প্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংখ্যা দুইশ’র ওপরে। এর মধ্যে ৭১ জন ছাত্র একদম বিনা খরচে পড়াশোনা করছে। আশেপাশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সন্তানেরাই তার মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে বলে জানান তিনি। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল আরও বলেন, ‘ফজরের একঘণ্টা পর ছাত্রদের নাস্তা হিসেবে ভাত-ডাল-ভর্তা দেওয়া হয়।’
সিলেটের এই আলেম এও জানান, তার প্রতিষ্ঠানে বেতনের বিষয়টি ঐচ্ছিক। সচ্ছল পরিবারের ছাত্ররাই কেবল প্রতিমাসে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা করে দিয়ে থাকে।
কোচিং-বাণিজ্য নেই কওমি মাদ্রাসায়
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কোচিং করা বা গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ার প্রয়োজন নেই বলে জানান মাওলানা জুলকারনাইন বিন আজাদ। তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসায় এমনভাবে পড়ানো হয়, যেন ঘরে ফিরে শিক্ষার্থীদের আর কারও কাছে পড়তে না হয়। কিতাব বিভাগের শিক্ষার্থীরা সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ক্লাস করে। এরপর মাগরিবের নামাজের পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তাদের শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ব্যক্তিগতভাবে ক্লাসের পড়া শেষ করার জন্য পড়ানোর ব্যবস্থা থাকে।’
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকরা বলছেন, এই ধারার শিক্ষামাধ্যমে পুরো সিলেবাস শেষ করা হয় এবং পুরো পাঠসূচি থেকেই প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয় বলে পাঠ্যদান ও পড়াশোনার সময় বেশি লাগে।
ঢাকার বাংলাবাজার ও চকবাজারকেন্দ্রিক কিছু ধর্মভিত্তিক গ্রন্থব্যবসায়ী দাওরায়ে হাদিসের প্রশ্নপত্রের সাজেশন্স তৈরির চেষ্টা করলেও তা বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোনও কোনও আলেম শিক্ষক।
এ বিষয়ে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার শিক্ষক মাওলানা এহসানুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসায় পুরো সিলেবাস শেষ করার কারণে প্রশ্নপত্র তৈরি হয় পুরো পাঠ্যসূচি থেকে। সেক্ষেত্রে সাজেশন্স বা এ ধরনের কোনও অপকর্মের দরকার পড়ে না।’ কিছু কিছু ধর্মভিত্তিক প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা গত বছর দুয়েক ধরে এ চেষ্টা করছে বলে জানান এহসানুল হক।
ছবি: চৌধুরী আকবর হোসেন ও সালমান তারেক শাকিল
আগামীকাল পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষার স্বীকৃতি পাবে কি কওমি?
গতকাল প্রকাশিত: সরকারি স্বীকৃতির তিন বছর, কতটা বদলেছে কওমি মাদ্রাসা?