সরস্বতী পূজার নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে ভোটকেন্দ্র সাজাবে ইসি

নির্বাচন ভবনঢাকা সিটি করপোরেশনের ভোটকেন্দ্র হিসেবে নির্ধারিত ৫৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজা উদযাপন করা হবে।  রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চিহ্নিত এসব কেন্দ্রের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে রয়েছে ২৭টি ও দক্ষিণ সিটিতে ২৬টি। এসব কেন্দ্রে সরস্বতী পূজা নির্বিঘ্নে উদযাপনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ভোটকক্ষ সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।  ওইসব প্রতিষ্ঠানে পূজা উদযাপনের নির্ধারিত স্থান বা কক্ষে ভোটকক্ষ স্থাপন করা হবে না। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) নির্বাচন ভবনে এক অনানুষ্ঠানিক কমিশন সভায় ঢাকার দুই রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এমনই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ভোটের দিন ভোটারদের যাতায়াতের সুবিধার্থে নির্ধারিত কিছু যান চলাচলের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের উদ্দেশে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, ‘কয়টি কেন্দ্রে পূজা হয়, তার একটি খসড়া তালিকা নিয়েছি। এতে দেখা গেছে ঢাকা উত্তর সিটিতে ১ হাজার ৩১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৭টি ও দক্ষিণ সিটির ১ হাজার ১৫০টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৬টিতে পূজা উদযাপন হয়। আমরা আরও তথ্য নিয়েছি, কোন জায়গায় পূজা হয়।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘অগ্রণী বালিকা বিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে পূজা করে, ক্লাসরুমে পূজা করে না। ওই প্রতিষ্ঠানের কিছু কক্ষে ভোটকক্ষ এমনভাবে স্থাপন করবো, যেন ভোটের কারণে পূজার সমস্যা না হয়। আবার পূজার জন্যও ভোটের সমস্যা না হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা জানিয়েছেন, ভোট ও পূজা করতে কোনও সমস্যা নেই।’

নির্বাচনের তারিখ পেছানো নিয়ে আপিল দায়ের প্রসঙ্গে ইসির সিনিয়র সচিব বলেন, ‘আপিলে শুনানি করতে আমরা আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছি। আদালত থেকে যে আদেশ আসবে, সে অনুযায়ী কাজ করবো।’ তিনি বলেন, ‘পূজা কিন্তু ২৯ জানুয়ারি। হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকের সঙ্গেই আমাদের কথা হয়েছে। তারা বলেছেন পূজা ২৯ তারিখেই শেষ। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, পূজা ৩০ জানুয়ারির ১১টা পর্যন্ত একটা সময় আছে।’

আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে  ইসির সিনিয়র সচিব বলেন, ‘অনুরোধ করবো, তারা যেন কোনও বিভ্রান্তির কবলে না পড়ে। কোনও রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে। তারা যেন লেখাপড়ায় মনোযোগ দেয়।’

বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে মো. আলমগীর বলেন, ‘ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের দিন কেবল ভোট দেওয়ার জন্য প্রাইভেট কার ব্যবহার করা যাবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য পুলিশকে দেখাতে হবে।’

প্রাইভেট কারের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার বিষয়ে  সচিব বলেন, ‘যারা এক এলাকায় বসবাস করেন কিন্তু ভোটার অন্য এলাকার, তারা তাদের প্রাইভেট কার নিয়ে ভোট দিতে পারবেন। যদি পুলিশ ধরে, বাসার ঠিকনা আর ভোটার আইডি কার্ড দেখিয়ে বলতে হবে, ভোট দিতে যাচ্ছেণ। তাহলেই চলাচল করতে পারবেন।’
ভোটের দিন ঢাকা থেকে বহিরাগত বের করার কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘ঢাকা শহর থেকে বহিরাগতদের বের করার কোনও সুযোগ নেই। কারণ ঢাকা শহরে সারাদেশ থেকে লোকজন আসেন। তাদের বের করা সম্ভব নয়।’

আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ইসি কী পদক্ষেপ নিচ্ছে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ‘আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করে প্রচার করলে রিটার্রিং কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দেখবেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ তারা নিয়েছেন। শাস্তিও দিয়েছেন। যারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন, তাদের জরিমানা করা হয়েছে। তারপর সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বিধি ভঙ্গ করলে আরও কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। ক্রমান্বয়ে কঠোরতা বাড়ানো হবে।’

অবৈধ অস্ত্র প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র যাদের কাছে, তাদের ধরতে জোরদার পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে খারাপ কোনও পরিস্থিতির রিপোর্ট নেই। সবই ভালো। খুবই আনন্দ উৎসবমুখর পরিবেশে সব প্রার্থী প্রচারণা চালাচ্ছেন।’

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রস্তুতির বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘প্রস্তুতি সন্তোষজনক। কোনও চ্যালেঞ্জ নেই। তবে প্রার্থীরা যত সক্রিয় থাকবেন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি তত বাড়বে।’ অনেকেই ভোটে জেতা নয়, পরিচিতি বাড়ানোর জন্য প্রার্থী হন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।