শাহজালালে থার্মাল স্ক্যানার সচল হলেও ‘কোয়ারেন্টাইন’ ব্যবস্থায় ত্রুটি

 

শাহজালার বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানারচীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে উৎপত্তি করোনা ভাইরাসের। ইতোমধ্যে আরও বেশ কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। বাংলাদেশেও চীন থেকে আসা যাত্রীদের ওপর রাখা হচ্ছে সতর্ক নজরদারি। বিমানবন্দরে সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তে ৩টি থার্মাল স্ক্যানার থাকলেও একটি বিকল ছিল। ২০ ডিসেম্বর থেকে করোনা ভাইরাস নিয়ে সতর্কতা নেওয়া শুরু হওয়ার পর ২৬ ডিসেম্বর ঠিক করা হয় থার্মাল স্ক্যানারটি। এছাড়া, শাহজালালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুসারে করা হয়নি কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা। উল্লেখ্য, রোগ যাতে অন্য ব্যক্তিদের মাঝে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঘরের মধ্যেই একনাগাড়ে থাকতে বলা কিংবা রাখাকেই ‘কোয়ারেন্টাইন’ ব্যবস্থা বলে অভিহিত করা হয়।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাস নিয়ে সতর্কতার অংশ হিসেবে ২০ জানুয়ারি বিমানবন্দরে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সেদিন থেকেই যাত্রীদের বিশেষভাবে স্ক্রিনিং করা শুরু হয়। এছাড়া বিমানবন্দরে কর্মরত ও এয়ারলাইন্স কর্মীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। তবে ৩টি থার্মাল স্ক্যানার থাকলেও দুটি দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

2জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে ইবোলা সংক্রমণ শুরু হলে ২০১৪ সালের নভেম্বরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনটি থার্মাল স্ক্যানার মেশিন বসানো হয়। তিনটি মেশিনের মধ্য একটি ভিআইপি জোনে, বাকি দুটি সাধারণ যাত্রীদের যাতায়াতের স্থানে বসানো হয়েছে। তবে বিভিন্ন সময়ে এই থার্মাল স্ক্যানারগুলো বিকল হয়েছে। ২০১৬ সালে জিকা ভাইরাসের নিয়ে আতঙ্ক শুরু হলে সে সময়ও শাহজালাল বিমানবন্দরের দুটি স্ক্যানার মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে। এ কারণে তখন যাত্রীদের সাধারণ থার্মোমিটারের মাধ্যমে জ্বর মাপা হয়।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, যাত্রী, দায়িত্বরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের প্রাথমিক চিকিৎসা, বিমানবন্দরের স্যানিটেশন, ফিউমিগেশন ও আগত যাত্রীদের মধ্যে সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্তদের শনাক্ত করতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রয়েছে স্বাস্থ্য কেন্দ্র। তবে পর্যাপ্ত জায়গা, জনবল ও যন্ত্রপাতি সংকট রয়েছে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। বিমানবন্দরের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার নির্ধারিত মানদণ্ড ও নীতিমালা থাকলেও তা যথাযথ অনুসরণ করা হচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত যাত্রী শনাক্তকরণ ও হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। প্রায়ই বিকল হয় থার্মাল স্ক্যানারগুলো। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুসারে থার্মাল স্ক্যানার মেশিনে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টাইন হাসপাতালে স্থানান্তর করার বিধান রয়েছে। এজন্য বিমানবন্দরের কাছাকাছি কোয়ারেন্টাইন হাসপাতাল থাকতে হবে অথবা বিমানবন্দরে কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা থাকতে হবে। শাহজালাল বিমানবন্দরে হ্যাঙ্গার গেটের কাছে একটি ভবনে কোয়ারেন্টাইন হাসপাতাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ভবনটি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে তাদের সদর দফতর হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়ায় এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি। পরবর্তীতে নিয়ম রক্ষার জন্য টার্মিনাল ভবনের নিচতলার একটি রুমে কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা করা হয়। যদিও সেটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হয়নি।

শাহজালালে ‘কোয়ারেন্টাইন’ ব্যবস্থানিয়ম অনুসারে সন্দেহভাজন আক্রান্ত ব্যক্তিকে শতভাগ নিশ্চিত না হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্য সব মানুষের কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে। নির্দিষ্ট স্থানেই সে ব্যক্তির খাওয়া, ঘুম, মলমূত্র ত্যাগের ব্যবস্থা থাকবে। এমনকি সুরক্ষার জন্য চিকিৎসকদেরও বিশেষ পোশাক পরতে হবে। শাহজালাল বিমানবন্দরের কোয়ারেন্টাইন রুমে রোগীর খাওয়া ও মলমূত্র ত্যাগের কোনও ব্যবস্থা নেই, সাধারণ যাত্রীদের টয়লেটই ভরসা। এমনকি বিমানবন্দর থেকে রোগীকে সাধারণ যাত্রীদের সংস্পর্শে না এনে হাসপাতালে নিতে পৃথক গেট রাখার ব্যবস্থা করার নিয়ম থাকলেও তা নেই সেখানে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রোগতত্ত্ব বিভাগের সিনিয়র অ্যাডভাইজার নাসির আহমেদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিমানবন্দরে ৩টি থার্মাল স্ক্যানার এখন সচল আছে। বিমানবন্দরে কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা আছে, জায়গার সমস্যা থাকায় সেখানে টয়লেট নেই। এ মুহূর্তে করোনার জন্য কোয়ারেন্টাইনের প্রয়োজন নেই। কেউ চেকিং পয়েন্টে সন্দেহজনক হলে বা আক্রান্ত কাউকে শনাক্ত করা হলে সরাসরি তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে। ইয়োলো ফিভারসহ অন্য কিছু রোগের ক্ষেত্রে কোয়ারেন্টাইনের প্রয়োজন হয়।