‘রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা আমাদের করতেই হবে’

জাতীয় সংসদ অধিবেশন (ফাইল ছবি-ফোকাস বাংলা)আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার চেয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে। ২৩ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক আদালত রোহিঙ্গাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। ওই মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় বের হলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা আমাদের করতেই হবে।’ বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘‘একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে মানবিক দিক বিবেচনায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে আসা ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। তিনি কেবল খাওয়া-পরার ব্যবস্থাই করেননি। বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সব সংস্থাকে সক্রিয় করে তোলেন।’’

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ রায় বের হওয়ার আগেই প্রত্যাবাসনের কাজ শুরু হবে।’

সরকার দলীয় এই এমপি তার বক্তব্যে নির্বাচনি এলাকার নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘অনেক বাধা ও ষড়যন্ত্র পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও প্রত্যয়ী নেতৃত্বে জনকল্যাণমুখী ও আধুনিক বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময়। আত্মসামাজিকসহ সব সূচকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।’

রাষ্ট্রপতির ভাষণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে পদ্মা সেতু, ঢাকার উড়াল মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ চলমান ১৬টি মেগাপ্রকল্পের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের চেহারাই বদলে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূল নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যাঞ্জেজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক দুরদর্শিতা ও সঠিক দিক নির্দেশনায় বিশ্বসেরা অর্থমন্ত্রীর স্বীকৃতি পেয়েছেন আমাদের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। এই বিরল সম্মান প্রধানমন্ত্রীরই অর্জন।’

অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিজয়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপ জিতে বাংলার দামাল ছেলেরা করেছে নতুন ইতিহাস। শক্তিমান ভারতে হারিয়ে অবিস্মরণীয় বিজয় অর্জন করেছি আমরা। এই বিশাল অর্জনের জন্য ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সরকার এত সব উন্নয়ন করলেও বিরোধী দল বিএনপির কাছে এসবের কোনও মূল্য নেই। তারা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সম্পর্কে সব সময় অপ্রীতিকর বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছে। তাদের উচিত হবে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে ত্যাগ করা, নেত্রীর মুক্তির চেষ্টা করা এবং অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখতে সব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা।’

নিজের নির্বাচনি এলাকার উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে সরকার কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘বিগত ১০ বছরে যশোরে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে, তা কোনও সরকারের আমলেই হয়নি। গত ৬ বছরে যশোর-৩ নির্বাচনি এলাকায় সরকারি হিসেবে ১৫শ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। আরও ৭শ কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়নাধীন আছে। ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত যশোরের শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেছেন। এই সফটওয়্যার পার্কে পাঁচ হাজার লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। এখানে প্রায় ১০০টি আইটি পার্ককে জায়গা দেওয়া হয়েছে। দুইশ কোটি টাকায় নির্মিত যশোর মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস আজ ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত। এই মেডিকেল কলেজে একটি ৫০০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপন ও হোস্টেলের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ জরুরি। সদর হাসপাতলের পরিত্যক্ত ভবন ভেঙ্গে ফেলে ডায়ালাইসিস সেন্টার আইসিইউ, সিসিইউ সুবিধাসহ পুরো হাসপাতাল সংস্কার দরকার।’

তিনি বলেন, ‘যশোরের প্রাণ ভৈরব নদ খুলনা-রূপসা থেকে নোয়াপাড়া হয়ে যশোরের ব্যবসা বাণিজ্যের মূলপথ এই নদী আজ প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। ২৮৭ টাকা ব্যয়ে এর খনন কাজ চলছে। রাজশাহীর পদ্মার পাড়ের মতো এই নদের দুই পাড় ঘিরে শহরের দঁড়াটানা থেকে জেলগেট পর্যন্ত পায়ে চলার পথ ও বসার ব্যবস্থা করতে পারলে মানুষ ঘোরাফেরার জায়গা পাবে। শহরের জরাজীর্ণ তিনটি ব্রিজ ভেঙ্গে আধুনিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি। যশোরের বিমানবন্দর বর্ধিতকরণের কাজ চলছে। খুলনা যশোর অঞ্চলের মানুষের সেবার জন্য এই বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে উন্নীতকরণের দাবি করছি।’

তিনি বলেন, ‘যশোরে যে উন্নয়ক কাজ চলছে, তাতে ঢাকা চট্টগ্রামের পর যশোর-খুলনাকে কেন্দ্র করে তৃতীয় অর্থনৈতিক করিডোর তৈরি হতে যাচ্ছে। যশোরকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে একটি অর্থনৈতিক জোন স্থাপন এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনুরোধ জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐহিত্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব ও রাষ্ট্রদর্শন বিষয়ে আলোচনা ও গবেষণার পথ প্রশস্ত হয়েছে। এই ভাষণ ভবিষ্যত প্রজন্মকে ন্যায় ও সত্যের পথে চলতে উজ্জীবিত করবে।’