করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফকে সহযোগিতার অনুরোধ অর্থমন্ত্রীর

করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতিতে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংককে বাংলাদেশের পাশে থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, কোনও দেশের একার পক্ষে এরকম একটি দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।তাই বিশ্বব্যাংক গ্রুপ এবং আইএমএফকে বিনীতভাবে অনুরোধ করবো, বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে তাদের পক্ষ থেকে বৃহত্তর সহযোগিতা নিশ্চিত করবে।

বুধবার (২৫ মার্চ) শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ সদর দফতরের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি এবং সহযোগিতা নিয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. ফজলে কবির নিজ দফতর থেকে এ কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, পুরো বিশ্ব সম্প্রদায় এখন একটি ক্রান্তিকাল পার করছে। করোনাভাইরাসের কারণে আজ মানব সম্প্রদায়ের জীবন ও অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। এমন একটি মুহুর্তে এই বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে এই ভিডিও কনফারেন্স আয়োজনের জন্য বিশ্বব্যাংক গ্রুপ ও আইএমএফ-এর প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আমরা সবাই জড়ো হয়েছি কিছু উপায় এবং পথ খুঁজে বের করে এই পৃথিবীর মানব সম্প্রদায়ের কাছে আশার একটি আলোক প্রদর্শন করার জন্য।’

বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সবাই অবগত আছেন যে এই মারাত্মক ভাইরাসের সংক্রমণ অতি দ্রুত ছড়ায়। করোনা সংক্রমণ রোধে এক মরিয়া পদক্ষেপ হচ্ছে—অভূতপূর্ব লকডাউন, শাটডাউন এবং যোগাযোগ ব্যাহতকরণ। যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিবার্য়ভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। বিশ্ব শেয়ারবাজার ইতোমধ্যে ২৮-৩৪ শতাংশ কমেছে। এই মন্দা দীর্ঘকাল স্থায়ী হলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে যেতে পারে। বাংলাদেশও এর প্রভাব অনুভব করতে শুরু করেছে।‘

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন, কোভিড -১৯ সংকটটি আমাদের অর্থনীতিকে বহুমাত্রিক দিক থেকে আঘাত করতে পারে। ইউরোপ ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের শাটডাউনের কারণে আমাদের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাকের চাহিদা কমে এ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের অবকাঠামো খাতের প্রকল্পগুলোতে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের বাংলাদেশি শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতিকে অনেকটা চাঙা করে রেখেছে। কিন্তু আমরা উদ্বিগ্ন যে এই করোনা ভাইরাস মহামারিজনিত কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মী বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন বলে রেমিটেন্সের ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন।’

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যেমন, বিগত ৩ বছর ধরে ধারাবাহিক ৭ শতাংশের অধিক হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিকতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৮ দশমিক শতাংশ, যা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সর্ব্বোচ্চ। আমরা এই বছর ৮ দশমিক ২ শতাংশ আশা করছিলাম। আমাদের এই ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান চালিকা শক্তি হচ্ছে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং সহায়ক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি। দুর্ভাগ্যক্রমে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশের ক্ষতি জিডিপি-র ১ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বিশ্লেষণ এই আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে। যখন আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যগুলো অর্জনসহ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার অপেক্ষায় আছি সেসময়ে বাংলাদেশসহ, বিশ্ব অর্থনীতি করোনা ভাইরাসের বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন।’

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক ১৪ বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক তহবিল গঠন করেছে। পাশাপাশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলোর সহায়তার জন্য ৫০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে আইএমএফ। এই অর্থের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার পাবে স্বল্প আয়ের দেশগুলো। সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর এই তহবিল থেকে একটি বড় অংশ সহযোগিতা পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ।