মোড়ে মোড়ে সাহায্য প্রত্যাশীদের অপেক্ষা

আছমা থাকেন রায়েরবাজার। স্বামী তাকে ছেড়ে গেছেন দুই বছর। ভাঙারি জিনিসপত্র কুড়িয়ে এনে বিক্রি করতেন। এতে যা সামান্য টাকা আসতো, তা দিয়ে পাঁচ ও সাত বছরের দুই ছেলেকে নিয়ে চলাই ছিল মুশকিল। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত বন্ধ হলো, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জনসাধারণের বাইরে বের হওয়াতে জারি হলো নিষেধাজ্ঞা। এতে ‘দিন এনে দিন খাওয়া’ আছমার উপার্জন বন্ধ হয়ে গেলো একেবারেই।

পান্থপথ সিগন্যালে সাহায্যের অপেক্ষায় মানুষ

২৬ মার্চ থেকে সবকিছু বন্ধ হওয়ার পর দুদিন কোনও রকম সংসার চললেও এখন আর চলছে না। বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন আছমা সাহায্যের প্রত্যাশায়। মঙ্গলবার পান্থপথ সিগন্যালে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পাশে এমন আশাতেই তিনি বসেছিলেন। শুধু তিনিই নন, সাহায্য পাওয়ার আশায় এমন আরও অন্তত ত্রিশজনের দেখা মিললো সেখানে।

মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) বিকাল থেকে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, জিগাতলা এলাকায় প্রায় প্রতিটি মোড়েই সাহায্যপ্রত্যাশীদের ভিড় ছিল গত কয়েকদিনের তুলনায় বেশি। তারা বলছেন, ‘কাম (কাজ) নাই, রোজগার নাই, খামু কী?’

মিরপুর রোডের সুবহানবাগে সাহায্য প্রত্যাশীদের অপেক্ষা

লালমাটিয়া এলাকায় কয়েকটি বাসায় কাজ করতেন শাহিনা। মার্চ মাস শেষ হওয়ার আগেই বাসাগুলোতে কাজে না যেতে বলে দেওয়া হয়েছে। গত ১০-১৫ দিন ধরে কাজ নেই তার। স্বামী কিছু করেন না। সংসারে রয়েছে চার বছরের এক মেয়ে। খাবার পাওয়ার আশায় তার মতো আরও সাত-আটজনকে বসে থাকতে দেখা যায় মিরপুর সড়কের পাশে সুবাহানবাগ এলাকায়।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় মিরপুর সড়কে মেট্রো শপিং মলের সামনে দেখা মেলে একদল ভবঘুরের। তারা আশপাশের ফুটওভার ব্রিজগুলোতে থাকেন। চলেন প্লাস্টিক কুড়িয়ে। মার্কেট ও পাশের ইউনিভার্সিটি খোলা থাকলে মানুষের কাছ থেকে খাবার চেয়ে নেন। এখন সব বন্ধ। তাদের খাবারও বন্ধ। কেউ যদি এসে সাহায্য দিয়ে যায়, সেই প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করছেন তারা।

ধানমন্ডি-২৭ নম্বর এলাকায় পুলিশের দেওয়া খিচুড়ি খাচ্ছেন দুই নারী

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে রাজধানীতে ‘কার্যত লকডাউন’ সময়ে অসহায় মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন অনেকেই। তাদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ জনগণ।

পুলিশের একটি গাড়ি থেকে এক প্যাকেট খিচুড়ি পেয়ে বেজায় খুশি কুলসুম ও রাবেয়া। রায়েরবাজারে বসবাস করলেও খাবার হাতে পেয়ে ধানমন্ডি-২৭ নম্বর সড়কের ফুটপাতে বসেই খেয়ে নিচ্ছিলেন তারা। রাতের খাবারের ব্যবস্থা হলেও সকালে কী খাবেন তা অনিশ্চিত জানান কুলসুম। তিনি বলেন, ‘এহনতো খাইলাম, সকালে কী খামু, জানি না?’