স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে উত্তরাঞ্চল থেকে ধান কাটা শ্রমিক পাঠাচ্ছে পুলিশ

1

উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটা শ্রমিক পাঠাচ্ছে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতর থেকে এ সংক্রান্ত একটি মোবাইল বার্তা পাঠানো হয়েছে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারদের কাছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের সহায়তায় শ্রমিকদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাদের হাওর অঞ্চলসহ কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ, বগুড়া, নাটোর ও টাঙ্গাইলে পাঠানো হয়েছে। জেলা পুলিশ রিকুইজিশন করে সরকারি খরচে আবার কোনও কোনও এলাকা থেকে বাসের ব্যবস্থাও করে দিয়েছে।

পুলিশের রংপুর রেঞ্জ কার্যালয় কর্মকর্তারা বলছেন,  সোমবার (২০ এপ্রিল) রংপুর রেঞ্জের বিভিন্ন জেলা থেকে ১৭৬ জন শ্রমিককে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে রংপুর থেকে ৪৬ জন, গাইবান্ধা থেকে ৩৯ জন, কুড়িগ্রাম থেকে ২৬ জন, দিনাজপুর থেকে ৬৫ জনকে পাঠানো হয়। মঙ্গলবারও (২১ এপ্রিল) শতাধিক ধান কাটা শ্রমিককে পাঠানো হয়েছে।

রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর আমরা রেঞ্জের সব জেলার পুলিশ সুপারদের ধান কাটা শ্রমিকদের একসঙ্গে করে হাওর অঞ্চলসহ যেখানে যেখানে প্রয়োজন সেখানে পাঠাতে বলেছি। এই প্রক্রিয়া যতদিন প্রয়োজন ততদিন চলবে।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের ধুলাউড়ী গ্রামের ধান কাটা শ্রমিকদের সর্দার মোস্তাফা ও খয়েদ আলী জানান, তারা আশপাশের গ্রামের ৪৫ জন একসঙ্গে ধান কাটার কাজ করতে যাবেন বলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এজন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও এক কপি ছবি প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছেন। তারা টাঙ্গাইলের কালিহাতি থানা এলাকায় ধান কাটতে যাবেন।

নীলফামারী জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান জানান, সোমবার জেলার জলঢাকা ও ডিমলা থেকে ৭২ জনকে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার সৈয়দপুর, ডোমার ও কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে ৯৬ জনকে পাঠানো হয়েছে। এদের টাঙ্গাইল, কুমিল্লা ও নাটোর পাঠানো হয়েছে। বুধবার পাঠানো হচ্ছে ১৫০ শ্রমিক।

2

পুলিশ কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেন, সিভিল সার্জনের সহায়তায় প্রত্যেক শ্রমিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে পাঠানো হচ্ছে। তাদের জ্বর-সর্দি-কাশি বা করোনার কোনও উপসর্গ আছে কিনা তা পরীক্ষা করে পাঠানো হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বলেন, আমার জেলা থেকে সোমবার ২৬ জন ধান কাটা শ্রমিককে পাঠানো হয়েছে। আমরা তাদের সরকারিভাবে গাড়ি রিকুইজিশন করে কিশোরগঞ্জে পাঠিয়েছি।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, উত্তরাঞ্চল থেকেই মূলত প্রতিবছর শ্রমিকরা দেশের বিভিন্ন জেলায় ধান কাটতে যায়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে যান চলাচল বন্ধ ও বিভিন্ন জেলা লকডাউন থাকায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শ্রমিক সর্দারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা কোন জেলায় যেতে চায় সেই অনুযায়ী তাদের ওই জেলায় পাঠানো হচ্ছে।

পঞ্চগড় জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, আমরা প্রত্যেকে থানা এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে যারা ধান কাটার শ্রমিক হিসেবে যেতে চায় তাদের নাম ঠিকানা দিতে বলেছি। একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রমিক হলে আমরা তাদের পাঠিয়ে দেবো।

 হাওরে ৬৫ কৃষি শ্রমিক পাঠালো ডিএমপি

এদিকে হাওর এলাকায় পাকা ধান কাটার জন্য ৬৫ শ্রমিক পাঠিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে তাদের একটি বিশেষ বাসে হবিগঞ্জে পাঠায় শাহবাগ থানা পুলিশ। ডিএমপির রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে হবিগঞ্জের স্থানীয় কৃষক ও আওয়ামী লীগের নেতারা যোগাযোগ করেছিলেন। তারা জানিয়েছিলেন, ওই এলাকার অনেক কৃষি শ্রমিকও ঢাকায় আছেন। এরপর আমরা সমন্বয় করে তাদের খুঁজে বের করি। তাদের একটি বিশেষ বাসে হবিগঞ্জে পাঠানো হয়েছে। আরও যদি কেউ এভাবে যেতে চান ধান কাটার জন্য, আমরা ব্যবস্থা করবো।