করোনা চিকিৎসায় আইভারমেকটিনের পরীক্ষামূলক গবেষণা আইসিডিডিআর,বি’র

করোনাভাইরাসকরোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক বা পরজীবীনাশক ওষুধ আইভারমেকটিনের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিন, অথবা শুধু আইভারমেকটিন ব্যবহারের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষামূলক গবেষণা শুরু করেছে আইসিডিডিআর,বি।

বুধবার (১৭ জুন) আইসিডিডিআর,বি’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় হাসপাতালে ভর্তি থাকা প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের নিয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করা হবে। এজন্য ঢাকার চারটি হাসপাতালের ৭২ জন রোগীকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এরইমধ্যে গবেষণা শুরু করেছে আইসিডিডিআর,বি। অন্য দুটো হাসপাতালের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আইসিডিডিআর,বি জানায়, আইভারমেকটিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)-এর অনুমোদনপ্রাপ্ত একটি ওষুধ, যা ১৯৮০ সাল থেকে পরজীবীজনিত সংক্রমণ রোধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। একইসঙ্গে অনেক ধরনের ভাইরাসনাশক হিসেবেও এটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে বলে গবেষণায় এসেছে।

আইসিডিডিআর,বি’র এই গবেষণার লক্ষ্য হলো— আইভারমেকটিনের সঙ্গে ডক্সিসাইক্লিন অথবা শুধু আইভারমেকটিনের সাহায্যে চিকিৎসা প্রদান করলে ভাইরাসের সংক্রমণ কমার হার এবং জ্বর ও কাশি কমতে কতদিন লাগে, সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করা। এছাড়া, অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তার পরিবর্তন, অক্সিজেন দেওয়া সত্ত্বেও রোগী কেন শতকরা ৮৮ শতাংশের বেশি অক্সিজেন স্যাচুরেশন (এসপিও-২) ধরে রাখতে পারেন না, রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ ও হাসপাতালে ভর্তি থাকার দিনের সংখ্যায় পরিবর্তন এবং এ রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা করা হবে।

আইসিডিডিআর,বি’র আন্ত্রিক এবং শ্বাস-প্রশ্বাস রোগের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসা বিজ্ঞানী এবং এই গবেষণার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ড. ওয়াসিফ আলী খান বলেন, ‘এই ভাইরাসের দ্রুত বিস্তারের কারণে আমাদের প্রয়োজন সার্স-সিওভি-২-এর বিরুদ্ধে কার্যকর একটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ খুঁজে বের করা। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের কাছে কোভিড-১৯-এর চিকিৎসা করার মতো কোনও ওষুধ নেই। এ ধরনের ওষুধ আবিষ্কার হতে কয়েক দশক লেগে যেতে পারে। তাই আমাদের এমন ওষুধ খুঁজে বের করা প্রয়োজন, যা বাজারে সহজলভ্য, যার ওপর যথেষ্ট গবেষণা করা হয়েছে এবং যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম এবং জীবন বাঁচাতে সক্ষম।’

আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক জন ডি ক্লেমেন্স বলেন, ‘বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি সাশ্রয়ী মূল্যের ও সহজে ব্যবহারযোগ্য চিকিৎসা পদ্ধতি খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ এ কাজে তাদের সহায়তা করার জন্য তিনি বেক্সিমকো ফার্মাকে ধন্যবাদ জানান।

আইসিডিডিআরবিবেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে আইভারমেকটিন ট্রায়াল গবেষণার ফল ইতিবাচক হলে কোভিড-১৯ মহামারির জন্য আইভারমেকটিন একটি অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যের ও সহজপ্রাপ্য সমাধান হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে।’

আইসিডিডিআর,বি জানায়, এই গবেষণায় আক্রান্ত ৪০ থেকে ৬৫ বছর বয়সী, মৃদু অসুস্থ এবং সাত দিনের কম সময় ধরে অসুস্থতায় ভুগছেন—এমন রোগীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

তবে গবেষণায় ব্যবহৃত ওষুধ দুটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে অ্যালার্জি রয়েছে এমন রোগী, হৃদরোগ, কিডনি এবং লিভারের সমস্যা আছে, অন্তঃসত্ত্বা বা বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের গবেষণার বাইরে রাখা হয়েছে।
গবেষণার আওতাভুক্ত একটি দলের রোগীরা এক ডোজ আইভারমেকটিনের সঙ্গে পাঁচ দিন ডক্সিসাইক্লিন পাবেন, অপর একটি দল প্রতিদিন শুধু একটি করে আইভারমেকটিন পাবেন এবং তৃতীয় দল পাঁচ দিনব্যাপী প্রতিদিন একটি করে প্লাসিবো পাবেন।

এসব রোগীকে শারীরিক, ক্লিনিক্যাল এবং গবেষণাগারে পরীক্ষার মাধ্যমে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার ছয় সপ্তাহ পর পুনরায় পর্যবেক্ষণ করা হবে। গবেষণার আওতাভুক্ত রোগীরা একইসঙ্গে তাদের শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী প্রচলিত চিকিৎসাও পাবেন।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের আার্থিক সহায়তায় দুই মাসের মধ্যে এই গবেষণা শেষ হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।