হারুনুর রশীদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজিকে ফোন করে মেসেজ দিয়ে সাড়া পাওয়া যায় না। ওই অফিসের পিএস, পিএ, পরিচালক কেউই ফোন ধরেন না। চীনা বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের করোনা ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর একটি বিকলাঙ্গ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এগুলো পরিবর্তন করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দিন। তাদের সরিয়ে দিয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য উপযুক্ত ও প্রতিশ্রুতিশীল ব্যক্তিদের সেখানে বসাতে হবে।’
করোনা চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘‘বিএমএ আওয়ামী লীগের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা বলেছেন, ‘করোনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দায় মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতরের।’ এটা বাস্তব কথা। করোনার এই দুঃসময়ে কিট বা করোনার সামগ্রী, কোভিড হাসপাতালে চিৎিসকদের কী দুরবস্থা। রোগীরা কী অবস্থায় আছেন। কোনও খবর নেই।’’
হারুন বলেন, ‘এই করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে তা আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। দেশে এখন জাতীয় যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণের জন্য জাতীয় ঐক্য দরকার। আর ঐকমত্য প্রশ্নে যে ক্ষতগুলো সৃষ্টি হয়েছে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে হাজার হাজার মামলা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।’
অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘‘উন্নয়নের রাজনীতির চিন্তাভাবনা বাদ দিতে হবে। ‘দেশ বাচাঁও, মানুষ বাঁচাও’-এর রাজনীতি করতে হবে। উন্নয়নে ব্যয় কমাতে হবে। প্রয়োজনে মন্ত্রিপরিষদের আকার ছোট করতে হবে। এর মাধ্যমে ব্যয় কমিয়ে মানুষকে বাঁচানোর পদক্ষেপ নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে অগ্রসর হতে হবে।’
সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, ‘সমাজে ঘুন ধরে গেছে। চাদাঁবাজ, দুষ্কৃতিকারী, মাদকপাচারকারী, অর্থ আত্মসাৎকারী, মানুষের হক নষ্টকারী ও সরকারি সম্পদ আত্মসাৎকারীরা এখন সমাজের ভদ্রলোক এবং ক্ষমতায় আছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। লজ্জা লাগে যখন আমরা দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্সের কথা বলি। কিন্তু মাদকপাচারকারীদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি এই সংসদে আসেন। তার স্ত্রী কী করে এই সংসদে আসলেন। এই বিষয়গুলো তদন্তের দাবি রাখে। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের আশ্রয়-প্রশয় না থাকলে তারা এই সংসদে আসতে পারতেন না।’
পুলিশের আইজিপির সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই এমপি বলেন, ‘পুলিশের আইজিপি বেনজীর সাহেব নতুন নতুন অসিয়ত দিচ্ছেন। উনার কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, আপনি বাংলাদেশের আমানত নষ্ট করেছেন। মানুষের হক নষ্ট করেছেন। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের আয়োজন করেছেন। তার জবাবদিহিতা আপনাকে করতে হবে না? গত নির্বাচনের সময় পুলিশকে পুরষ্কৃত করা হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা দুর্নীতিতে অংশগ্রহণ করেছেন। এই পুলিশ দিয়ে সৎ প্রশাসন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। পুলিশের দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে— তারা আওয়ামী লীগের গোলাম ও দাসবাহীতে পরিণত হয়েছেন। আর সত্য বলতে গেলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হৈ চৈ করবেন।’
হারুনুর রশীদ বলেন, ‘এমন এক সময় করোনার আঘাত বাংলাদেশে এসেছে, যখন দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায়। রেমিট্যান্স ছাড়া সবকিছুই ছিল একেবারেই নিম্নমুখী। ব্যাংক খাত, শেয়ারবাজার, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুবই নাজুক। এসব খাতে দরকার ছিল প্রণোদনা। এই দুর্বল অর্থনীতি নিয়ে আমাদের করোনা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। এই চ্যালেঞ্জের মাত্রা নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতি কতদিন দীর্ঘস্থায়ী হবে তার ওপর। জীবন বাঁচাতে হবে। খাদ্যের যোগান এবং চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। করোনা সংক্রমণ রোধ করতে হবে। আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। যাদের রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। করোনা মোকাবিলায় সরকার বেশকিছু পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে। এর বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সুশাসন ও সমন্বয় খুবই দরকার। অপরদিকে সরকার যে প্রণোদণা ঘোষণা করেছে, তা পর্যাপ্ত কিনা এবং তা বাস্তবায়নের সক্ষমতা আছে কিনা? সেটও প্রশ্ন রাখে। করোনাভাইরাসে সারা পৃথিবী বিপর্যস্ত এতে কোনও সন্দেহ নেই। এই অবস্থায় সরকারকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।’
বাজেটের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘বাজেটে রাজস্বপ্রাপ্তির যে কথা বলা হয়েছে, তা হাস্যকর এবং অকল্পনীয়। কর খাতে চলতি অর্থবছরের তুলনায় যেটা বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে, তা কোনোভাবেই আদায় করা সম্ভব হবে না। করোনাকালে যে ধরনের বাজেট প্রণয়ন করার দরকার ছিল, তা করতে সরকার সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো, বাজেটটিকে সংশোধিত আকারে পাস করবেন।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সামনে দেশে দুটি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। উত্তরাঞ্চলে ইতোমধ্যে আগাম বন্যার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এজন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে খাদ্যের মজুত বৃদ্ধি করতে হবে। প্রয়োজন হলে বিদেশ থেকে আমাদানি করে মজুদ নিশ্চিত করতে হবে। যেনও কোন অবস্থায় মানুষ না খেয়ে মারা না যায়।’
তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনাসহ সামাজিক বেষ্টনী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়গুলোর ব্যয় বাড়ানোর দাবি করেন।
হারুন ইন্নানিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউন—পড়ে বাজেট বক্তব্য শুরু করলে সংসদে সভাপতির দায়িত্বে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া এটা দিয়ে শুরুর কারণ জানতে চান। ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘এটা দিয়ে বক্তব্য শুরুর রেওয়াজ আমি আমার সাত টার্মে এমপিদের মধ্যে দেখিনি।’ অবশ্য হারুনুর রশীদ এমপি পরে এর ব্যাখ্যা করার প্রতিশ্রুতি দেন।