মালদ্বীপ প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন, মালদ্বীপের হলুমালেতে আইল্যান্ড এক্সপার্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ৬০০ এর বেশি শ্রমিক কাজ করে। এরমধ্যে প্রায় ৫০০ জন বাংলাদেশি, ভারতীয় নাগরিক ১০০ জন ও ইন্দোনেশিয়ার ৫০ জন কাজ করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি শ্রমিকদের সাত মাসের বেতন বকেয়া রেখেছে। এর আগে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ৭ জুলাই ও ২৫ জুন বকেয়া বেতনের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। এক সপ্তাহ আগে শ্রমিকরা বকেয়া বেতন না পেলে আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দেয়। সে সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের বিরোধ ও হাতাহাতি হয়। সে সময় কমপক্ষে ১৫ বাংলাদেশিকে আটক করে পুলিশ।
প্রবাসীরা জানিয়েছেন, ঘটনার সূত্রপাত ঘটে সোমবরা স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে। বেতনের দাবিতে আইল্যান্ড এক্সপার্ট লিমিটেডের শ্রমিকরা রাস্তায় নামে। পুলিশ শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে গেলে শ্রমিকরা প্রতিবাদ করে। তারা পুলিশের ওপর ইট পাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে এবং গাড়ি ভাঙচুর করে।
মালদ্বীপের সংবাদ মাধ্যম দ্য এডিশনের খবরে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের হামলায় পুলিশ সদস্যরা আহত হয়েছেন। পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করেছে আন্দোলকারীরা। স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে এই ঘটনায় ৪১ জন আটকের বিষয়ে মালদ্বীপ পুলিশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সোমবার সকালে একদল প্রবাসী শ্রমিক পুলিশের সঙ্গে সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সম্পত্তি নষ্ট করে। শ্রমিকদের ইটের আঘাতে বেশ কিছু পুলিশ সদস্য আহত হয়। এই ঘটনায় ৪১ জনকে আটক করা হয়েছে এবং তদন্তের জন্য তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ধরনের সহিংসতার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মালদ্বীপ পুলিশ সার্ভিস। বেতন না পাওয়া বা অন্য যে কোনও ধরনের ইস্যুতে আইনগত পদক্ষেপ নিতে শ্রমিকদের আহ্বান জানিয়েছে তারা।
আন্দোলন প্রসঙ্গে নাজমুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বকেয়া বেতন ভাতা, বিক্ষোভের প্রধান কারণ। পুলিশ বেশকজনকে আটক করেছে বলে মিডিয়া রিপোর্টে বলছে। তবে কতজন কোন দেশের সেটা এখনও পুলিশ জানায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা এদেশের সরকারকে অনুরোধ করেছি বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের বিষয়ে কোম্পানিকে বাধ্য করার জন্য। একইসঙ্গে আমাদের লোকজনকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করে যাচ্ছি। পরিস্থিতি এখন সবার জন্যই কঠিন। আমরা আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশিদের সার্বিক কল্যাণের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
এই বিষয়ে দেশটির সরকারের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠক হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ’ওই বৈঠকে আমাদের প্রতিনিধি থাকবে। আমার সঙ্গে একাধিক মন্ত্রীর কথা হয়েছে এবং আমি তাদেরকে অনুরোধ করেছি বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনার জন্য।’
বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে দুটি ফ্লাইটে ৪০০ বাংলাদেশে ফেরত আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, ’তাদের ফেরার খরচ মালদ্বীপ সরকার বহন করছে।’
মালদ্বীপ প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের মহামারীতে বিদেশিদের প্রবেশ বন্ধ রেখেছে মালদ্বীপ। ফলে পর্যটন নির্ভর মালদ্বীপের হোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁয় কাজ করা শ্রমিকরা চাকরি হারাচ্ছেন। তাই শ্রমিকরা ফ্লাইট চালু হলে স্বেচ্ছায় ফিরতে চাচ্ছেন। ইতোমধ্যে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন হাজার ৭৯৩ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে মালদ্বীপ। দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ আর বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ বাংলাদেশি সেখানে রয়েছে, যার মধ্যে অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি।