দেশের ৩১ জেলা বন্যাকবলিত। বন্যার কারণে জেলাগুলোর প্রায় ৪৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭৩২ জন মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে পানিবন্দি মানুষকে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে। কারণ ঢাকা মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, চাঁদপুর, গাইবান্ধা, নাটোর বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, ও নওগা জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আগামী কয়েকদিনে আরও অবনতি হতে পারে। এর পর হয়তো পানি নামতে শুরু করবে, তবে সমুদ্রে জোয়ার থাকলে দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যার পানি নামতে বিলম্বিত হবে। যা চলবে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত।
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় দেশের বন্যাকবলিত ৩১ জেলার মধ্যে রয়েছে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, ফেনী, নওগাঁ, শরীয়তপুর, ঢাকা, নোয়াখালী, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, লক্ষীপুর, নাটোর, গাজীপুর, মৌলভীবাজার, মুন্সিগঞ্জ ও মাদারীপুর। এসব জেলার পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ৪৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭৩২ জন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৬০৯টি। বন্যাকবলিত ইউনিয়নের সংখ্যা ৮৯৯টি। আর এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে, নৌকা ডুবে মারা গেছেন ৩৫ জন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, সোমবার ২৭ জুলাই বিকাল সাড়ে ৪টা নাগাদ দেশের বন্যা কবলিত জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এক হাজার ৫৯২টি। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা ৮৮ হাজার ২৩৩ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৩৬ হাজার ৪৯৭ জন, নারী ৩২ হাজার ৯৯৮ জন। শিশুর সংখ্যা ১৮ হাজার ৪৭৬ জন ও প্রতিবন্ধী ২৭২ জন।
এদিকে চলমান বন্যা মোকাবিলায় দুর্গত মানুষদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কোভিড ও বন্যা যেহেতু একসঙ্গে এসেছে, এ কারণেই একটু বেশি কেয়ারফুল থাকতে হবে। সব মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠেই থাকবেন, মানুষের পাশে থাকবেন। এসময় বন্যায় আমনের ক্ষতি হলেও পলির কারণে বন্যার পরের সুফল নিতে কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজারদের নির্দেশনা দেন তিনি।
এদিকে জানা গেছে, এখনও বন্যা কবলিত চার জেলায় কোনও আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়নি। অন্যদিকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বেশ কয়েকটি জেলায় খোলা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে দুর্গত লোকজন বাড়ি চলে গেছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিজেস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (এনডিআরসিসি) সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট, মৌলভীবাজার, নোয়াখালী ও ও গাজীপুর জেলায় কোনও আশ্রয়কেন্দ্র নেই। এর মধ্যে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, লালমনিরহাট সদর, আদিতমারি ও পাটগ্রাম উপজেলায় পানিবন্দি ৩৯ হাজার ৫৪৮টি পরিবারের মানুষের সংখ্যা এক লাখ ৭৭ হাজার ৯৬৬ জন।
এছাড়াও মানিকগঞ্জ জেলায় ১০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে তা বন্যা কবলিত মানুষের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এ জেলায় এখনও পর্যন্ত বন্যা কবলিত মানুষের সংখ্যা মাত্র তিন হাজার ৯৬ জন। পরিবারের সংখ্যা ৬৮৮টি।
বন্যাকবলিত জেলায় জরুরি সেবার জন্য ৯৩৬টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হলেও বর্তমানে ৪১৮টি টিম কাজ করছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যবহারের জন্য বিশেষ নৌযান বা উদ্ধারকারী বোট প্রস্তুত করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড যৌথভাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে আগামী ৩ বছরে ৬০টি নৌযান সরবরাহ করবে। প্রতিটি বোটে প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম, একটি হুইল চেয়ার, একটি স্ট্রেচার এবং একটি ওয়াকিটকি থাকবে। প্রতিটি বোটে ৮০ জন যাত্রী ছাড়াও গৃহপালিত পশুপাখি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি বহন করা যাবে।