বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্লাজমা সেন্টার উদ্বোধন

বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্লাজমা সেন্টার উদ্বোধনজাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করে প্লাজমা সেন্টারের উদ্বোধন করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। শনিবার (১৫ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবসে ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে প্লাজমা সেন্টার উদ্বোধন করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন আহমেদ খান।

এসময় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আজ আমি নতুন জীবন পেয়েছি। আমি করোনা আক্রান্তের সময় প্লাজমা নিয়ে তেমন কোনও ধার ছিল না। তখন ডা. এম এ খান আমাকে বললেন, এটা নিতে। তাই আমার এটা নতুন জীবন। সঠিকভাবে পরীক্ষা করে যদি প্লাজমা দেওয়া যায়, তাহলে কোভিড-১৯ ভালো হলেও যে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয় তা ভালো হয়। আমার মনে হয় ডা. এম এ খানের নেতৃত্ব সারা দেশের প্রতিটি জেলায় প্লাজমা সেন্টার হওয়া দরকার।‘

বৈজ্ঞানিক নিয়ম মেনে আমরা প্লাজমা নেবো- উল্লেখ করে ডা.জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আপনার জানেন চার মাস পরে রক্ত পানি হয়ে যায়। তাই সবাইকে বলতে হবে করোনামুক্ত সবাই রক্ত দান করুন।’

এসম গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘করোনা মহামারি প্রতিরোধে সরকারের প্রতিটি সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। নানা ধরনের নীতিমালা প্রণয়নের নামে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিলম্ব হওয়ায় অন্যান্য দেশে থেকে পিছিয়ে পড়েছে সরকার।‘

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হলেও তার আদর্শ প্রতিষ্ঠা হয়নি বলে উল্লেখ করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘দেশে যতদিন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবে ততদিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠা হবে না।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে থেকে জানানো হয়, প্রথম দিকে প্রতিদিন ২৫ জনকে প্লাজমা দেওয়া হবে। সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিদিন ৫০ জনকে প্লাজমা দেওয়া হবে এবং অতিরিক্ত ৫০ জনকে প্যাকড সেল, প্লাটিলেট, বিভিন্ন ব্লাড ফ্যাক্টরস এবং থ্যালাসেমিয়া ও হিমোগ্লোবিনপ্যাথির জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা হবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের আইসিইউ প্রধান অধ্যাপক ডা. নাজিব মোহাম্মদ, গণস্বাস্থ্যের অ্যান্টিবডি কিটের উদ্ভাবক ডা.বিজন কুমার শীল প্রমুখ।

হেমাটো অনকোলজিস্ট অধ্যাপক এম এ খান বলেন, ‘প্লাজমা দুই পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হয়। ওটাকে প্লাজমাফেরিসস করা হয় একটা মেশিনের সাহায্যে। সেটা ব্যয়বহুল। ৩০ থেকে ৪০ লাখ একটা মেশিনের দাম। নমুনা সংগ্রহ করতে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাগে। আরেকটা পদ্ধতি হলো, করোনাভাইরাস থেকে সেরে উঠা রোগীর রক্তের নমুনা থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করা। এখানে সমস্যা হলো, এক জন থেকে যে প্লাজমা সংগ্রহ করা  হবে,  তা শুধু একজনকে শুধু একবার দেওয়া যাবে।’

বর্তমানে প্লাজমার চাহিদা কমে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষের আতঙ্ক কমে গেছে। আমার মনে হয় সেপ্টেম্বরের দিকে করোনা ডিক্লাইন ফেইজের দিকে আসবে, আস্তে আস্তে কমতে থাকবে।’

এম এ খান বলেন, ‘প্লাজমা থেরাপি কোন সময়ে কাকে দিতে হবে, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগে থেকে প্ল্যান করে, বয়স্ক রোগী যারা রয়েছেন, তাদের যদি আমরা কোভিড আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি দিতে পারি, এটা হলো উত্তম। কারণ সুনির্দিষ্ট ভ্যাক্সিন আসার আগ পর্যন্ত এটা খুব কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি।  কারণ আমরা জানি, অ্যান্টিভাইরাস যেগুলো ব্যবহার হচ্ছে এবং ইনজেকশন ফর্মে যেসব ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে, এগুলোর জন্য কমপক্ষে ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়।’

প্লাজমার বড় চ্যালেঞ্জ হল ডোনারদের কারও কারও নমুনায় অ্যান্টিবডি কম থাকে- জানিয়ে ডা. এম এ খান বলেন, ‘যারা অধিকমাত্রায় আক্রান্ত হন, যাদের মধ্যে লক্ষণ উপসর্গ বেশি থাকে, তাদের মধ্যে  অ্যান্টিবডি বেশি থাকে। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, অ্যান্টিবডি পরিমাপ করা। কিছু কিছু জায়গায় অ্যান্টিবডি টেস্ট হচ্ছে।  প্লাজমার মূর শক্তি হচ্ছে অ্যান্টিবডি। কারণ এটা ভাইরাসের গায়ে লেগে ভাইরাসটাকে অকেজো করে দেয়, তখন ভাইরাস আর সেলের মধ্যে ঢুকতে পারে না। অ্যান্টিবডি টেস্ট দ্রুত করা দরকার। প্লাজমা দিতে হবে প্রথম দিকে। প্রথম দিকে শরীরে ভাইরাসের পরিমাণ  বেশি থাকে।’

আরও পড়ুন- 

কিট অনুমোদন না পাওয়ায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতি গণস্বাস্থ্যের: জাফরুল্লাহ