৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের থ্রিডি হলোগ্রাম প্রদর্শিত হবে জাতীয় জাদুঘরে

হলোগ্রাফি প্রোজেকশনে বক্তব্য রাখছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের থ্রিডি হলোগ্রাম এখন জাতীয় জাতীয় জাদুঘরের সংগ্রহশালায়। এই হলোগ্রামটি জাদুঘরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দর্শকদের জন্য এ মাসেই প্রদর্শন করা হবে। এছাড়া বছরের বিশেষ দিনগুলোতেও এই হলোগ্রাফ প্রচারিত হবে। শনিবার (১৫ আগস্ট) জাতীয় জাদুঘরের কিপার শিহাব শাহরিয়ার বিয়টি নিশ্চিত করেন।

শিহাব শাহরিয়ার বলেন, ‘এটি সর্বসাধারণের প্রদর্শনের জন্য কাজ চলছে। এ মাসেই আমরা প্রদর্শন করবো। বছরের বিশেষ দিনগুলোতেও এটি দর্শকদের জন্য প্রদর্শন করা হবে।’

জাতীয় জাদুঘর সূত্রে জানা গেছে, হলোগ্রামটি জাদুঘরে প্রদর্শন করতে উপস্থাপন নিয়ে এডিটিংয়ের কাজ চলছে। এডিটিং শেষ হলে এ মাসেই একবার প্রদর্শন করা হবে। এছাড়া প্রতি বছর ৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন দিবস (১০ জানুয়ারি), জাতীয় দিবস (২৬ মার্চ), বিজয় দিবস (১৬ মার্চ) এবং বছরের বিশেষ দিবসেও এটি প্রদর্শিত হবে। জাতীয় জাদুঘর এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে সংগ্রহ করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, ৪৯ বছর পর গত (২০২০) ৭ মার্চ আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত জয় বাংলা কনসার্ট অনুষ্ঠানে সেটির থ্রি ডি হলোগ্রাম প্রথম প্রচার করা হয়। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের থ্রিডি হলোগ্রাম প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বাস্তবের আবহ নিয়ে বঙ্গবন্ধু হাজির হয়েছিলেন সবার চোখের সামনে। এই হলোগ্রাম চমকের শুরুটা হয়েছিল সেদিন কবি নির্মলেন্দু গুণের বিখ্যাত কবিতা ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ আবৃত্তির মধ্য দিয়ে।

কবিতাটি শেষ হতেই মঞ্চে হাজির হন হলোগ্রাফিকরূপে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। উপস্থিত প্রতিটি মানুষই ধরে নিয়েছেন তারা দুজন বাস্তবেই হাজির। দুজনের মুখে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ৩২ নম্বর সড়কের বাড়ির পরিস্থিতি, তাদের মা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের দূরদর্শী পরামর্শের স্মৃতিচারণ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে কবিতার শেষ কটি লাইনের আবৃত্তি পুরো পরিবেশকে এক ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যায়। এরপর হঠাৎ মঞ্চ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো মিলিয়ে যান দুই বোন, পলকেই সবার সামনে হাজির হন বঙ্গবন্ধু! শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর রেসকোর্স ময়দানের সেই ভাষণ, যা দেখে বোঝার কোনও উপায় ছিল না যে— এটি বাস্তবে নয়, পর্দায় চলছে!

হলোগ্রাফি প্রোজেকশনে বক্তব্য রাখছেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা

পুরো প্রজেকশন শেষে সবাইকে আরেকবার চমকে দেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সরাসরি অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থেকে। প্রজেকশন শেষে বাস্তবে তাদের উপস্থিতি দেখে অনেকেই বিভ্রমে পড়েন— সত্যি! নাকি এটাও হলোগ্রাফিক চমক।

এই প্রকল্পটির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন সংগীতশিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, পুরো প্রজেক্টের পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছেন জনপ্রিয় গীতিকার ও বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল। এই হলোগ্রাফিক প্রযুক্তির কারিগরি সহযোগিতা দিয়েছে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এনডিই সল্যুশন লিমিটেড।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তত্ত্বাবধানে এই হলোগ্রাম নির্মাণ করেছে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। টেকনোলজি ও নলেজ পার্টনার এমডিএইচ হলোগ্রাম। আবৃত্তি করেছেন মাহিদুল ইসলাম, সংগীত/শব্দ সংযোজনায় ইফতেখার আনাম, অ্যানিমেশন সাজিয়েছেন মানিক দাস। ১৯৭১ সালের ফন্ট পুনর্ডিজাইন করেছেন আবুল হোসেন খোকন। অনুবাদ করেন সাগুফতা শারমীন তানিয়া। স্থানীয় কারিগরি কনসালট্যান্ট ছিলেন তৌফিক রহমান। ইভেন্ট প্রজেকশন তত্ত্বাবধান করেছেন এম এন ইসলাম নায়িম।

এনডিই সল্যুশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ এসএ হোসেইন জানান, হলোগ্রাফি হচ্ছে— এমন এক ধরনের ফটোগ্রাফিক প্রযুক্তি, যা কোনও বস্তুর ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তিতে তৈরি করা ত্রিমাত্রিক ছবি ‘হলোগ্রাম’ নামে পরিচিত। হলোগ্রাম প্রযুক্তির সর্বশেষ চমৎকারিত্ব হলো থ্রিডি হলোগ্রাম প্রজেকশন, যা থ্রিডি চশমা ছাড়াই সবার কাছে দৃশ্যমান।