আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়াতে শোক দিবস পালন




ব১বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে স্মরণ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শহীদ হওয়া তার পরিবারের সদস্যসহ অন্য সবাইকে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি দূতাবাসের উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়।

কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষিতে সব জায়গায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব মেনে মিশনগুলোতে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সবগুলো মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার মাধ্যমে জাতীয় শোক দিবস পালনের কর্মসূচি শুরু হয়। এসময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানগুলোর শুরুতেই ১৫ আগস্টের সব শহীদদের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে ১৫ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয় ও জাতির পিতার জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত বিশেষ প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

নিউ ইয়র্ক স্থায়ী মিশনে ইউনেস্কোর বাণী
নিউ ইয়র্কে স্থায়ী মিশনে বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার নেতৃত্বে মিশনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। স্বাগত ভাষণে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, জাতির পিতার সংগ্রাম ও ত্যাগ বিশ্বমানবতাকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পথ দেখাবে। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রথমবারের মতো জাতির পিতার বাংলায় দেওয়া ভাষণের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আজ পৃথিবীর সব দেশ এজেন্ডা-২০৩০ এর ১৭টি অভীষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে আমরা এর অধিকাংশের কথাই খুঁজে পাই।’

দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন ইউনেস্কোর মহাপরিচালক মিজ্ অড্রে অজৌলে। বাণীতে তিনি বলেন, মানুষের অধিকার আদায় ও স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম ও ত্যাগের যে আদর্শ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেখে গেছেন, তার শাহাদাতের চার দশক পরেও বিশ্ব তা স্মরণ করছে।

ব২প্যারিস দূতাবাসে কমিশন গঠনের আহবান
দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল ভার্চুয়াল মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী অতিথিবৃন্দের বঙ্গবন্ধুর জীবন ও দর্শনের ওপর আলোচনা। আলোচকরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা জড়িত ছিলেন তাদের স্বরূপ উদঘাটনের জন্য কমিশন গঠনের আহবান জানান। বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ ও জনমানুষের জন্য ত্যাগ ও সংগ্রামের চেতনা বুকে ধারণ করে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রবাসী বক্তাগণ। ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, একটি গর্বিত জাতির স্বতন্ত্র পরিচয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর যে দুর্লভ সম্মান বাঙালি পেয়েছে, তার জন্য সমগ্র জাতি বঙ্গবন্ধুর প্রতি চিরকৃতজ্ঞ ও চিরঋণী।

ব৩ভিয়েনাতে শোক দিবস
ভিয়েনাতে আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা ’৭৫-এর ববর্রোচিত ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান। বক্তারা বিদেশে পলাতক খুনিদের দেশে ফেরত নিয়ে শাস্তি কার্যকরের দাবি জানান। জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্বনেতা। তখন বিশ্ব ছিল দু’ভাগে বিভক্ত। এক অংশ ছিল শোষক ও অন্য অংশ ছিল শোষিত। বঙ্গবঙ্গু ছিলেন শোষিত মানুষের পক্ষে এবং তিনি ছিলেন শোষিত মানুষের নেতা।

ব৪ক্যানবেরাতে আলোচনা সভা
শোক দিবস আলোচনা অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার মোহাম্মাদ সুফিয়ুর রহমান বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মর্যাদা, সম্মান ও স্বাধীনতার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু আপসহীন ছিলেন। বাঙালি জাতির বাস্তবতা, স্বাতন্ত্র্য এবং আকাঙ্ক্ষার নিরিখে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবোধকে সুসংহত করেছিলেন। তিনি সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং মর্যাদাশীল দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপরও দিয়েছিলেন বিশেষ গুরুত্ব। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সবাই বাংলাদেশ হাইকমিশনের ডব্লিউ. এ. এস. ওডারল্যান্ড, বীরপ্রতীক লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ কিছু ছবি দেখেন। উল্লেখ্য, বছরব্যাপী মুজিববর্ষ পালনের অংশ হিসেবে এতে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক নেতা হিসেবে গড়ে ওঠা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলনে নেতৃত্ব দান, তৎকালীন বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ও সখ্যতা ছাড়াও ব্যক্তি মুজিব ও পারিবারিক জীবনের মুজিবকেও প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়।

ব৫দিল্লিতে বঙ্গবন্ধুর ওপর বই
দিল্লিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি বই প্রকাশ করা হয়। ‘ইমমরটাল বঙ্গবন্ধু’ নামে ওই বইটি দূতাবাসের উদ্যোগে প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ ইমরান বঙ্গবন্ধুকে হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।