ভারী বৃষ্টিতে বন্যা কবলিত মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে

বাঁধ ভেঙে প্লাবিত সাতক্ষীরা উপকূল (ফাইল ছবি)

নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে না গেলেও ভারী বৃষ্টিতে ভোগান্তি কমছে না বন্যা কবলিত মানুষের। নদীর পানি স্থিতিশীল থাকায় নতুন করে কোনও এলাকা প্লাবিত হয়নি। তবে এখনও দেশের ৩৩টি জেলা বন্যা কবলিত। ইতোমধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন ৪২ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪৯ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৭ জন।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া জানান, ব্রহ্মপুত্র নদ ও যমুনা, পদ্মা, গঙ্গা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। একইভাবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকার নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ মধ্য উপকূলীয় এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এতে বন্যা কবলিতদের ভোগান্তি বাড়বে। কিন্তু বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, গতকালের তুলনায় নদীর পানি আরও কমেছে। গতকাল যেখানে দেশের ৪ নদীর চার পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপরে ছিল, আজ তিন নদীর তিন পয়েন্ট বিপৎসীমার ওপরে আছে পানি। আত্রাই নদীর বাঘাবাড়ি পয়েন্টে ১১, ধলেশ্বরী নদীর এলাসিন পয়েন্টে ২৫ এবং পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, আজ চট্টগ্রাম ও বরিশালে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে যশোরে ৮৮ মিলিমিটার। এছাড়া ঢাকায় ২৩, ময়মনসিংহে ১১, চট্টগ্রামে ৬১, সিলেটে ২০, রাজশাহীতে ২, রংপুরে ৩, খুলনায় ১৬ এবং বরিশালে ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জানান, লঘুচাপের প্রভাব এবং সাগরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। এটি আগামী দুদিন একই অবস্থায় থাকতে পারে। তবে এতে বন্যার পানি খুব বেশি বাড়বে না। কারণ দক্ষিণাঞ্চলেই বেশি বৃষ্টি হচ্ছে যা নদী হয়ে দ্রুত সাগরে চলে যাবে।

পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়ার এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ও তাদের আশেপাশের দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১ থেকে ২ ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ার হতে পারে। এতে বন্যা কবলিত এলাকায় পানির উচ্চতা বাড়লে তা সাময়িক সময় থাকবে।
এদিকে দুর্যোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বন্যা কবলিত ৩৩টি জেলা হলো: সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, বগুড়া, জামালপুর, সিলেট, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, নওগাঁ, শরীয়তপুর, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নাটোর, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, নওগাঁ, মৌলভীবাজার, গাজীপুর, গোপালগঞ্জ ও পাবনা।

এসব জেলার ১৬০টি উপজেলার ১০২৬টি ইউনিয়ন এখনও বন্যা কবলিত অবস্থায় আছে। এসব ইউনিয়নের ৭ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৮টি পরিবার পানিবন্দি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪৯ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৭ জন।

মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই সপ্তাহের পরই কমে আসবে বন্যার প্রকোপ। তবে এখন বৃষ্টিতে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন বন্যা কবলিত মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের চেষ্টা চলছে। এছাড়া যারা বাড়ি ফিরে গেছেন, তাদেরও ত্রাণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্যা কবলিতদের জন্য রাখা হয়েছে মেডিক্যাল টিম।