দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (এনডিআরসিসি) সূত্রে জানা গেছে, ২৫ আগস্ট পর্যন্ত বন্যাকবলিত ৩৩ জেলার ৭ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৮ পরিবারের ৪৯ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৭ জন মানুষ বানভাসি। প্রায় ৮ লাখ পরিবারের ৫০ লাখ মানুষ পানিবাহিত রোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। বন্যার পানিতে ঘর-দুয়ার ভেঙে গেছে, আয় নেই, রোজগারের পথ নাই, ঘরে খাবার নেই—এমন অবস্থায় নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে তারা এখন দিশেহারা। স্থানীয় হাসপাতালেও চিকিৎসা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার ১নং কুলকান্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা দিনমজুর হরি নারায়ণ দাস জানিয়েছেন, এবারের বন্যায় যে কী পরিমাণ দুর্ভোগ হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এতো লম্বা সময় বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা ঘরবাড়িতে এখন আর বসবাসের উপায় নাই। ঘরের চাল থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ঘরদুয়ারের সবকিছুই বদলাতে হবে। পানিতে পচে গেছে সব। ভাঙা বাড়িঘর রোদে শুকায় আর মড়মড় করে ভেঙে পড়ে। এখন এগুলো ঠিক করবো নাকি চিকিৎসা করাবো তা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছি না।
তিনি জানান, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে ঠিকই, কিন্তু ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে আছে আমাশয় এবং জন্ডিস। সরকারি হাসপাতালে সব রোগের একই চিকিৎসা দেয় বলে মনে হয় হরি নারায়ণের। তিনি জানান, সরকারি হাসপাতালে জ্বর আর জন্ডিসের একই ওষুধ। ডায়রিয়ার স্যালাইন মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়, বেশিরভাগ সময় পাওয়া যায় না। তখন বাইরের দোকান থেকে কিনতে হয়। একইভাবে গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা, কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী, শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলায়ও বন্যার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার বানভাসি মানুষেরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম তাহের জানিয়েছেন, এখনও তেমন মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তবে আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। মেডিক্যাল টিম গঠন করা আছে। যেকোনও জরুরি প্রয়োজনে বা পরিস্থিতিতে আমরা চিকিৎসা সেবা দিতে পারবো।
এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, ৯৮-এর বন্যার তুলনায় এবার বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম। ওই সময় প্রায় ৪০ জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এবার ৩৩ জেলা। একইভাবে সে সময় প্রায় ৫০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়, এবার প্লাবিত হয়েছে ৩০ ভাগ এলাকা। সে সময় বন্যা স্থায়ী হয়েছিল ৬৯ দিন, এবার ৪৬ দিন। তিনি জানান, আমরা রিলিফ বেইজ জায়গা থেকে বের হয়ে দুর্যোগের ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করছি। এজন্য নদী শাসন, নদীভাঙন রোধে নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দেশে আরও ৩ হাজার ১৮৭টি বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং মুজিব কেল্লা নির্মাণ করা হবে। ১১০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ২০ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং ৫৭টি মুজিব কেল্লা এক বছরের মধ্যে করার জন্য পরিকল্পনা করেছি।