বাংলাদেশে করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয় গত ২১ জানুয়ারি। প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী হিসেবে তিন জনের কথা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানায় গত ৮ মার্চ। এরপর ১৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর তথ্য জানায় সরকারি এই প্রতিষ্ঠান। শুরু থেকেই করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের হার কম ছিল, তখন নমুনা পরীক্ষাও হতো কেবলমাত্র এই প্রতিষ্ঠানে। ধীরে ধীরে নানা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নমুনা পরীক্ষা করার অনুমতি দেয় সরকার। বর্তমানে দেশে ৯৪টি প্রতিষ্ঠানে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে।
তবে নানা কারণে কিছু কিছু পরীক্ষাগার বন্ধও থাকছে। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে সরকার নির্ধারিত করোনা পরীক্ষার ফি, দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা, পরীক্ষা করাতে এবং পরীক্ষার ফলাফল পেতে ভোগান্তি। এসব কারণে করোনার নমুনা পরীক্ষার হার কমে এসেছে, সেই সঙ্গে কমেছে শনাক্তের হারও।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (১২ সেপ্টেম্বর) করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ২৮২ জন। আর এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছেন তিন লাখ ৩৬ হাজার ৪৪ জন রোগী। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ১০ হাজার ৯৮টি এবং নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১০ হাজার ৭২৩টি। শনাক্তের হার ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত রোগীর হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। সেই থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ৩ আগস্ট সর্বোচ্চ আক্রান্তের হার ছিল শতকরা ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ। তবে আগস্টের শেষ থেকে সংক্রমণের হার কমতে শুরু করে।
তথ্যমতে, গত ১১ মে’তে শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক শূন্য আট শতাংশ। সে হিসেবে ১২ সেপ্টেম্বর ১২৪ দিন অর্থাৎ চার মাস পর শনাক্তের হার সবচেয়ে কম ছিল।
এদিকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে যে হারে রোগী শনাক্ত করা প্রয়োজন, তা হচ্ছে না। অথচ দরকার ছিল রোগী শনাক্ত করে তাদের আইসোলেশনে রাখা, তাদের সংস্পর্শে আসাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা। এখন করোনায় আক্রান্তের হার নিম্ন দিকে বলে আত্মতুষ্টির কোনও সুযোগ নেই। কারণ পরীক্ষা কম হওয়ার কারণে শনাক্তের হার কমেছে।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরামর্শক ও রোগতত্ত্ববিদ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, রোগী শনাক্তের হার গত কয়েকদিন ধরে কিছুটা কম। কিন্তু সংক্রমণ কম, এটা বলা যাবে না। এ ভাইরাস আপনা-আপনি চলে যাবে না বা সংক্রমণ কমবে না। কখনও হয়তো নানা কারণে সংক্রমণের হার কমতে পারে, কিন্তু যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে শনাক্তের হার পাঁচের নিচে নামতে সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে সবার ইনফেকশন হয়ে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, সেজন্য সংক্রমণ কমে যাচ্ছে, এটা ঠিক নয়। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্বের মতো স্বাস্থ্যবিধিও আমরা মেনে চলছি না, তাই প্রকৃত অবস্থা বুঝতে আরও সময় লাগবে।
বাংলাদেশের করোনার প্যাটার্ন অন্য দেশের সঙ্গে মিলছে না উল্লেখ করে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, এটাও একটা ভাবার বিষয়। ফলাফল জানতে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।