রবিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে নীলক্ষেত ও পুরান ঢাকার বাবু বাজারের সৈয়দ হাসান আলী লেনের পাইকারি প্রতিষ্ঠান ও কারখানাগুলো ঘুরে দেখা গিয়েছে, খুব একটা হইচই নেই পাইকারি দোকানগুলোতে। মাঝে মধ্যে দু-এক জন ক্রেতা আসছেন আবার কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকছেন দোকান মালিক ও কর্মচারীরা। কারখানাগুলোও কমিয়েছে লোকবল।
দোকান মালিকদের তথ্য মতে, এই স্টেশনারি ব্যবসায়ে পাইকারি দোকানগুলোতে দিনে এক থেকে দেড় লাখ টাকা বিক্রি হতো। আর খুচরো প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিক্রি হতো ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। কিন্তু করোনার কারণে এখন বিক্রি নেই। বর্তমানে অনেকেই চলছেন ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে। আবার অনেকে দোকান ভাড়াই দিতে পারছেন না। যার ফলে অনেকটাই হতাশা ব্যবসায়ীরা।
নীলক্ষেতে আরেক ব্যবসায়ী মমিনুর মিয়া বলেন, ‘৬ মাস ধরে ব্যবসা একেবারেই শেষ। এখন যে দোকানের মালামাল দেখছেন, এগুলো নতুন করে ঋণ নিয়ে কেনা। পুরো মার্কেটের বাকি ব্যবসায়ীদেরও একই অবস্থা এখন। স্কুল-কলেজ না খুললে আমাদের ব্যবসা হয় না, স্কুল কলেজের সঙ্গেই আমাদের ব্যবসা। এখন সেই অপেক্ষাতেই আছি।’
স্টেশনারি ব্যবসার পাইকারি ব্যবসায়ীরা বসে আছেন গোমরা মুখে। করোনার সাধারণ ছুটিতে ২ মাস একেবারেই বন্ধ ছিল পাইকারি ব্যবসায়ের মার্কেট। পরবর্তীতে সরকার সব অফিস আদালত খুলে দেয় সীমিত পরিসরে। তখন থেকে শুরু হয় আবারও স্টেশনারি ব্যবসা। তবে স্টেশনারি ব্যবসা জড়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। যার ফলে ব্যবসা শুরু হলেও শুধুমাত্র ব্যবসা ধরে রাখার জন্য মাসের পর মাস পরিচালনা খরচ বহন করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
পুরান ঢাকার বাবু বাজারের সৈয়দ হাসান আলী লেনের পাইকারি আব্দুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনা পরবর্তী সময়টায় আমাদের খুব খারাপ অবস্থা হয়েছে। ব্যবসা ছিল এককেন্দ্রিক। শুধু অফিস-আদালতে মালামাল সাপ্লাই করি এখনও। অন্যদিকে স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে ব্যাপক মালামাল লাগতো সারা বছর, সেই অংশটা এখনও বন্ধ আছে। করোনার আগে আমাদের প্রতিদিন ৮০ থেকে এক লাখ টাকা বিক্রি ছিল। এখন আমাদের বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। এদিকে বিদেশি মালামালের জন্য ঋণের চাপ আছে। আমাদের এখন একটাই চাওয়া, সরকারের কাছে স্কুল-কলেজ খুলে দিলে হয়তো আমাদের ব্যবসা আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।’
আরেক ব্যবসায়ী ইকরাম হোসেন বলেন, ‘আগে যখন সবকিছু খোলা ছিল তখন অনেক ভালো ব্যবসা হতো। এখন স্কুল বন্ধ, তবে অফিস-আদালত খোলা থাকার কারণে টুকটাক বিক্রি হচ্ছে। এতে করে দোকান ভাড়াটা অন্তত দিতে পারছি। আগেই স্কুলের জন্য খাতা, ডায়েরি, ফাইলসহ অনেক কিছু অর্ডার হতো। এখন এগুলো বিক্রি বন্ধ, সেইসঙ্গে কাজও বন্ধ আছে। আগে ডেইলি এক থেকে দেড় লাখ টাকা বিক্রি হতো, এখন হয় ২০-৩০ হাজার টাকা । বর্তমান অবস্থায় ব্যবসায় কোনও লাভ হচ্ছে না।’
উৎপাদনকারী ইউসুফ আহমেদ বলেন, ‘এই এলাকায় সব মিলিয়ে প্রায় লাখ খানেক কর্মী স্টেশনারি পণ্য উৎপাদনে কাজ করে। কিন্তু সেই কর্মী সংখ্যা এখন প্রায় ৬০ হাজার। বাকিদের বাধ্য হয়ে কাজ থেকে অব্যাহতি দিতে হয়েছে। কারণ নিয়মিত ইনকাম ছাড়া তাদের বেতন দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না।’
ফাইলবক্স তৈরি কারখানার মালিক উজ্জ্বল সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাবা কী করবো, এখন তো সবাইকে বেতন দিতে পারি না। অর্ডার কম। দীর্ঘ দিন ধরে আমার এই কারখানাটিতে ১০ জন শ্রমিক কাজ করতো। করোনায় দুই মাস বন্ধ ছিল। এখন অর্ডার নাই বললেই চলে। মাত্র ৩ জন নিয়ে কারখানা চালাই। তারপরও অপেক্ষা করতে হয় আরেক অর্ডারের জন্য। আর আগে ১০ জনেও কাজ শেষ করতে পারতাম না।’
স্টেশনারি ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অপেক্ষায়। তাদের আশা স্কুল-কলেজ খুললেই ব্যবসা আবার ঘুরে দাঁড়াবে। মেশিনের শব্দে কারখানা হবে মুখর, আর পাইকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আবার জমজমাট হয়ে উঠবে।