রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

জাতিসংঘে প্রস্তাবিত দাবিগুলো বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে সরকার

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড় দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। ফাইল ছবি: বাংলা ট্রিবিউনমিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে ২০১৭ এর আগস্টে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে চলে আসে। ওই বছর সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এই সমস্যা সমাধানে পাঁচ দফা দাবি প্রস্তাব করেন। ২০১৮ সালে একই প্রস্তাব পূনর্ব্যক্ত করলেও ২০১৯-এ নতুন প্রেক্ষাপটে চার দফা প্রস্তাব পেশ করা হয়। তিন বছর পার হলেও নিরাপত্তার অভাবের কারণে একজন রোহিঙ্গাও দেশে ফিরতে রাজি হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবিত দাবিগুলো বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়ার কৌশল নিয়েছে সরকার।

শনিবার (২৬ আগস্ট) এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন জোরদার করতে হবে। আমরা অনেকগুলো দাবি করেছি এবং এখন সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।’

রাখাইনে নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এই বিষয়টি বলে যাব এবং এজন্য বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবো।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণে বলেন, ‘বাংলাদেশ ১১ লাখেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিককে আশ্রয় প্রদান করেছে। তিন বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমার একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। এই সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্ট এবং এর সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই ব্যাপারে আরও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।’

রোহিঙ্গারা ফেরত যাচ্ছে না এবং রাখাইনে বর্তমান সংঘাতময় পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ওখানে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে সেটি বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে।’

২০১৭ সালে যে প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল সেই ধরনের একটি পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। সেদিকে ঈঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে রাখাইন ও সীমান্ত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে আমরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করেছি।’

প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেকগুলো গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তাদের দাবি রাখাইনসহ কয়েকটি অঞ্চলে নির্বাচন স্থগিত করতে হবে। সে কারণে তারা কুখ্যাত অপারেশন ক্লিয়ারেন্স অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মংদু টাউনশিপ অবরোধ করে রেখেছে মিয়ানমার বাহিনী। এছাড়া সেপ্টেম্বরের প্রথমে বাংলাদেশ সীমানার ২০০ মিটারের মধ্যে বেসামরিক নৌকায় করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বেশ কিছু সদস্য শুকনো জায়গায় অবতরণ করে। সীমানার খুব কাছে মোট এক হাজার সেনাবাহিনী জড়ো করে মিয়ানমার এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশকে কিছুই জানানো হয়নি। সেপ্টেম্বরের ১৪ তারিখে মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে সমন করে এই বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ জানিয়ে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি হস্তান্তর করা হয়।