বাংলাদেশ দলে থাকবেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন; এছাড়া বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, পানি ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ আরও প্রতিনিধি বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক পরিপক্ব ও রাজনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। কোভিড পরিস্থিতির কারণে এবার ভার্চুয়াল বৈঠক হচ্ছে। তবে আমরা আশা করছি এরপরের বৈঠক আরও বড় পরিসরে হবে।’
কী কী বিষয় আলোচনায় আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সম্পর্ক, অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব, কোভিড-১৯ সহযোগিতা, লাইন অব ক্রেডিট, কানেক্টিভিটি, পানি, সীমান্ত হত্যা, রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য সবকিছু নিয়ে আলোচনা হবে।’
২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, একইসঙ্গে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর—এ উপলক্ষে ঢাকা ও দিল্লিসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ও আন্তর্জাতিক সংস্থা যৌথভাবে অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়টি এবারও আলোচনায় থাকবে বলে তিনি জানান।
এছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন দেশে যৌথভাবে অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়েও আলোচনা হবে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশতবার্ষিকী উপলক্ষে দুই মন্ত্রী মিলে একটি ডাকটিকিট উন্মোচন করার কথা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
পানি ও সীমান্ত হত্যা
বাংলাদেশ ও ভারত অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ তিস্তাচুক্তিসহ অন্যান্য সাতটি নদীর পানিবণ্টন সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, ১০ বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু তিস্তাচুক্তির সমাধান হয়নি। এ বিষয়ে আমরা জোর দেবো। এছাড়া অভিন্ন সাতটি নদীর পানিবণ্টন সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছে। আমরা একটি কাঠামো চুক্তির অধীনে ওইসব নদীর পানিবণ্টন করতে চাই।
গত কয়েক বছর সীমান্ত হত্যা কিছুটা কম হলেও এ বছর এটি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয় বলে তিনি জানান।
এই কর্মকর্তা বলেন, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বিষয়ে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ বিষয়টি আমরা তাদের আবারও মনে করিয়ে দেবো।
অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলোচনা করবেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অশুল্কজনিত বাধা দূর করার বিষয়ে তাগিদ থাকবে। এছাড়া বাংলাদেশ সবসময় বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করে এবং আরও অধিক ভারতীয় কোম্পানি যাতে বাংলাদেশে আসে, সে বিষয়ে আলোচনা হবে বলে তিনি জানান।
কোভিড পরিস্থিতিতে সড়কপথে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায় কিছুটা অব্যবস্থাপনা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায়, সে বিষয়েও প্রস্তাবনা থাকবে।
কোভিড-১৯ সহযোগিতা
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সহযোগিতার বিষয়ে দুই দেশ আগেও আলোচনা করেছে। মঙ্গলবারের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আবারও কথা হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে। করোনার টিকার পরীক্ষা থেকে শুরু করে বাংলাদেশে এর উৎপাদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে উল্লেখ করে সূত্রটি আরও জানায়, ভারত টিকা পরীক্ষার জন্য একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভাষণে টিকা উৎপাদনে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেছেন এবং ভারতের সঙ্গে এ বিষয়ে সহযোগিতা হতে পারে বলে তিনি জানান।
লাইন অব ক্রেডিট
ভারতের সঙ্গে মোট ৮০০ কোটি ডলারের লাইন অব ক্রেডিটের মধ্যে ১০০ কোটি ডলারেরও কম অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অগ্রগতি অত্যন্ত ধীর বলে অভিযোগ রয়েছে, যা নিয়ে আলোচনা করবেন দুই মন্ত্রী।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূতের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার জন্য তারা বিভিন্ন পদক্ষেপ ও সুপারিশ করবেন।
প্রকল্প চিহ্নিতকরণ ও ঠিকাদার নির্বাচনের মাধ্যমে কাজের শুরু পর্যন্ত অনেক ধাপ পার হতে হয়। প্রতিটি ধাপে কম সময় ব্যয় করার জন্য কী করা দরকার, সে বিষয়ে ওই কমিটি কাজ করবে।
এছাড়া কানেক্টিভিটি, রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য আরও বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে তিনি জানান।