৪৯ বছর পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব ভবন, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

পানি ভবন (ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা শপিং মলের পশ্চিম পাশে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর নতুন ‘পানি ভবন’ বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর)  উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৬০ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভবনটি উদ্বোধন করবেন। এরমধ্য দিয়ে স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর নিজস্ব ভবন পাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ১২ তলাবিশিষ্ট পানি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এই ভবনে হবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদর দফতর।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব প্রকৌশলীদের নকশায় প্রায় চার লাখ ২০ হাজার বর্গফুট আয়তনের এ ভবনের নির্মাণে লেগেছে প্রায় সাড়ে চার বছর। কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পানি ভবনে সোলার প্যানেল, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, রেইন ওয়াটার রিজার্ভারের মতো পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাসহ ৫৩৬ জন ধারন ক্ষমতার অডিটরিয়াম, চার হাজার ৫০০ বর্গফুটের হেলিপ্যাড, ৩৭৬টি গাড়ি পার্কিংসহ অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে।

এই কমপ্লেক্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মৃতিবিজড়িত পুকুরটি (২১ হাজার ৪৮৪ বর্গফুট) সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং ২০ হাজার ৬২৫ বর্গফুটের একটি জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৫৪ এবং ১৯৫৫ সালের উপর্যুপরি ভয়াবহ বন্যার পর জাতিসংঘের অধীনে গঠিত ক্রুগ মিশনের সুপারিশে সেচ ব্যবস্থা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ পানিসম্পদের উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় পূর্ব পাকিস্তান পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ইপিওয়াপদা) গঠিত হয়। ১৯৭২ সালে ইপিওয়াপদার ‘পানি উইং’ নিয়ে সৃষ্টি হয় ‘বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড’ (বাপাউবো) নামে স্বতন্ত্র সংস্থা।

দেশের পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও টেকসই উন্নয়ন সাধন, বন্যা, খরা, জলাবদ্ধতা, আন্তর্জাতিক নদীর প্রবাহ, লবণাক্ততা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা ও প্রাকৃতিক পরিবেশের যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি, মৎস্য, বন ইত্যাদি ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পানিসম্পদের পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা করার উদ্দেশ্যেই এই প্রকল্পটি গ্রহণ করে সরকার। সে কারণে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)। স্বাধীনতার পর ৪৮ বছর পার হলেও সেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব অফিস ছিল না। এবার স্বাধীনতার ৪৯ বছরে নিজস্ব ভবন পাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। যদিও সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিলুপ্ত করে গঠন করছে পানিসম্পদ অধিদফতর। যা সরকারের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পানি ভবনে যা থাকছে

পানি ভবন ১২ তলাবিশিষ্ট, দৈর্ঘ্য ২৭৬ ফুট এবং প্রস্থ ১২৭ ফুট, ফ্লোরের মোট এরিয়া ৩৫ হাজার বর্গফুট বেজমেন্ট এবং সেমি বেজমেন্টের উচ্চতা ১০ দশমিক ৮২ ফুট, ফ্লোর উচ্চতা (নিচতলা) ১৩ দশমিক ৭৫ ফুট, ফ্লোর উচ্চতা (অন্যান্য তলা) ১২ দশমিক ২৫ ফুট, ভবনের মোট উচ্চতা ১৭৪ ফুট (সিভিল এভিয়েশন কর্তৃক অনুমোদিত উচ্চতা ১৭৪ ফুট)। অডিটোরিয়াম দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট এবং প্রস্থ ৫১ ফুট, মোট এরিয়া পাঁচ হাজার ১০০ বর্গফুট (প্রায়)। অডিটোরিয়াম উচ্চতা ২১ ফুট, অডিটোরিয়াম ধারণক্ষমতা ৫৩৬ জন। সার্ভিস ভবন তিনতলাবিশিষ্ট, দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট এবং প্রস্থ ৬০ ফুট, প্রতি ফ্লোরের মোট এরিয়া ছয় হাজার বর্গফুট (প্রায়)।

সার্ভিস ভবনের উচ্চতা ১৪ ফুট, প্রধান জলাধারের দৈর্ঘ্য ২৭৫ ফুট এবং প্রস্থ ৭৫ ফুট, মোট এরিয়া ২০ হাজার ৬২৫ বর্গফুট (প্রায়), পুকুরের দৈর্ঘ্য ১৬৪ ফুট এবং প্রস্থ ১৩১ ফুট, মোট এরিয়া ২১ হাজার ৪৮৪ বর্গফুট (প্রায়), হেলিপ্যাডের এরিয়া চার হাজার ৫০০ বর্গফুট (প্রায়)।

ভবনের বেজমেন্ট এবং সেমি বেজমেন্টে পার্কিং সংখ্যা ১৭৬টি, ভবনের বাইরে খোলা জায়গায় পার্কিং সংখ্যা ২০০টি, কমন টয়লেটের সংখ্যা ৪৮টি, রুমের সঙ্গে অ্যাটাচড টয়লেট সংখ্যা ৭০টি, ভবনের লিফট সংখ্যা আটটি। লিফটের ধারণক্ষমতা প্রতি লিফটে সর্বোচ্চ ১৩ জন করে। ভবনের ১১ তলায় কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে। সোলার প্যানেল ৪০ কিলোওয়াট (অনগ্রিড টাইপ) এবং ভবনের জেনারেটর চারটি প্রতিটি ৬৫০ কেভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন। অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, আধুনিক স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) রয়েছে এই ভবনে।