বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক (ফাইল ফটো)

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নিজের জীবনের কিছু ঘটনার স্মৃতিচারণ করেছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। বঙ্গবন্ধুর আইনজীবী ও বন্ধু প্রয়াত সিরাজুল হকের ছেলে আনিসুল হক ছাত্রজীবনে তাদের বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর যাওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন।

বুধবার (১১ নভেম্বর) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতীয় সংসদে বিশেষ অধিবেশনে আনা সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে তিনি এই স্মৃতিচারণ করেন। এর আগে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা জানাতে ১৪৭ বিধিতে সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিজের স্মৃতির ঘটনা উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ১৯৬৯ সাল, তখন বয়স আমার সাড়ে ১৩ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মোহাম্মদপুরের বাসায় এলেন। মনটা আমার উৎফুল্ল হয়ে গেল। আসার হেতু, আমার পিতা তাঁর বন্ধু ও আইনজীবী। সেদিন বা তার দুই-একদিন আগে পাকিস্তান সরকারের একটি মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নির্দোষ প্রমাণিত করে কোর্ট খালাস দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু একটি টয়োটা গাড়িতে করে আমাদের বাড়ি পৌঁছলেন। আমার পিতার সঙ্গে কোলাকুলি করার পর একটি মিষ্টির প্যাকেট হাতে দিয়ে বললেন—‘উকিলের বাসায় খালি হাতে আসা উচিত নয়। তুই তো ফি নিবি না, এক প্যাকেট মিষ্টি এনেছি।’ তিনি ভেতরে গিয়ে বসলেন। তারপর যখন চা এলো। চায়ের সঙ্গে গুড়ের সন্দেশও উনার জন্য দেওয়া হলো। আমি ওনার পাশেই ছিলাম। উনি সন্দেশের বাটিটা হাতে নিয়ে আমাকে বললেন—‘তুই নে।’ আমি বললাম, আগে আপনি নেন। জবাবে আমাকে বললেন, ‘তুই যদি না নিস, তাহলে পুরো বাটিটা মাটিতে ফেলে দেবো।’ তখন তাড়াতাড়ি করে আমি একটা সন্দেশ নিলাম। উনিও একটা নিলেন। যাওয়ার সময় পিতাকে জিজ্ঞাসা করলেন— ‘সাংবাদিক এবিএম মুসার বাড়ি নাকি তোর বাড়ির কাছেই? আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আমার ছদ্মনাম ছিল পরশ। ওর ছেলের নামও নাকি পরশ রেখেছে। তাকে একটু দেখে যাবো।’

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসার আপসহীন অবস্থানের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আইনজীবী আনিসুল হক বলেন, ‘‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সময় বঙ্গমাতাকে যখন তারা বেডরুম থেকে নিয়ে আসছিল এবং সিঁড়ির কাছে এসে যখন বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখছিলেন, তখন ঘাতকদের তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে এখানেই মেরে ফেলো। আমি আর কোথাও যাবো না।’ মৃত্যুর মুখে পড়লে মানুষ স্বাভাবিকভাবে বাঁচার চেষ্টা করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি বঙ্গমাতার ভালোবাসার নিদর্শন তিনি মৃত্যুর সময়ও দেখিয়ে গেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো মৃত্যুকে ভয় পাননি। খুনিদের কাছে জীবন ভিক্ষা চাননি। আদর্শের ব্যাপারে আপস করেননি। এটাই বঙ্গবন্ধু, এটাই বঙ্গমাতা। এটাই বঙ্গবন্ধুর পরিবার। তারা নীতিতে অবিচল, আদর্শে অটল।’’

বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘মহামানব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গরিবের হক আদায়ের ব্যাপারে ছিলেন দৃঢ়চিত্ত। মমত্ববোধও তাঁর হৃদয়ে ছিল বিশাল সমুদ্র সমান। সেই ঘটনার ছাপ আজও আমার জীবনে অম্লান। বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষকে ভালোবাসা দিয়ে জয় করে ফেলেছিলেন। বাংলার মানুষও সবকিছু উজাড় করে দিয়ে তাঁকে ভালো বেসেছিলেন।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর প্রত্যেকটি পদক্ষেপই শিক্ষণীয়। আইনের শাসনের প্রতি তাঁর ছিল অগাধ বিশ্বাস। আদালতের প্রতি ছিল গভীর আস্থা। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তাঁর ছিল দৃঢ়তা। নিজের অভিজ্ঞতার উপলব্ধি দিয়ে বুঝেছিলেন মানুষের দুর্দশা লাঘবের শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে আদালত। এ কারণে তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিয়ে সংবিধানে স্থান দিয়েছিলেন। জনগণের যাতে দুর্ভোগ পোহাতে না হয়, তার জন্য তিনি সংবিধানে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের কথা বলেছেন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের স্বাধীনতার কথা নিশ্চিত করে গিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই স্বাধীনতা ও পৃথকীকরণ স্বপ্নই রয়ে গিয়েছিল। মাজদার হোসেনের রায়ের পথ ধরে ২০০০ সালে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ হয়। কিন্তু পৃথক অবকাঠামো না থাকায় তা সম্পূর্ণ কার্যকর হতে পারেনি। বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার সারা বাংলাদেশে ভবন নির্মাণ, বেতন বৃদ্ধি, গাড়ি সরবরাহ করে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ অর্থবহ করেছেন। জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ সুগম করেছেন।’