করোনার পরও লটারিতে ভর্তি চলবে: শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকরোনার কারণে এ বছর প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে অনলাইনে শিক্ষার্থীদের ভর্তি চলবে। হবে। তবে করোনার পর স্বাভাবিক অবস্থাতেও অনলাইনে লটারিতে ভর্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বুধবার (২৫ নভেম্বর) ভার্চ্যুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি।  প্রেস ব্রিফিংয়ে সংযুক্ত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এবার বাধ্য হয়েই এই প্রক্রিয়ায় গেলেও প্রক্রিয়াটি যুক্তিযুক্ত। এই প্রক্রিয়াটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সাম্য আনবে। আমরা ভবিষ্যতেও হয়তো চালাতে পারবো।  তবে নির্ভর করবে এবছর কতটা সাফল্যের সঙ্গে আমরা বাস্তবায়ন পারি। যদিও একটি বছরেই  ফলতো সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পাওয়া যায় না।  তবে আমরা যে শিক্ষার মানের চিন্তা-ভাবনা করছি, তাতে ভবিষ্যতেও রাখবো আরও উন্নত করবো। ’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন,  ‘আপাত দৃষ্টিতে এটা অযৌক্তিক মনে হতে পারে। কিন্তু ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে, দেখলে বোঝা যাবে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন তৈরি হবে। প্রচলিত ব্যবস্থায় কেবল অ্যাকাডেমিক অর্থে গুটিকয়েক বিদ্যালয়ে মেধাবীরা কেন্দ্রীভূত হয়। ফলে বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এক ধরনের অসাম্য তৈরি হয়। একটি দেশে শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে হলে বিদ্যালয়গুলোতে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ’ 

দীপু মনি বলেন, ‘আমাদের পাঠ্যক্রম পদ্ধতিতে যে পরিবর্তন আসছে, তাতে কোন স্কুলে পড়ছি তা নিয়ে খুব বেশি একটা তফাৎ থাকবে না।  যে স্কুলেই পড়ুক না কেন টেলিভিশনে যে ক্লাসগুলো হচ্ছে— তা সবার জন্য সমান মানের। ২০২২ সালে যে শিক্ষাক্রম আসছে, কোন স্কুল কতটা নামি, আর বাকি শিক্ষার্থীরা কতটা মেধাবি, সেটার চেয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থী নিজে নিজে দলগতভাবে, কমিউনিটির সঙ্গে হাতে-কলমে কীভাবে কাজ করবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ’

তিনি বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী ভিকারুননিসা, রাজউক, আইডিয়ালসহ এরকম আরও যেকটি স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না, অধিকাংশই তার বাইরে। সেই অসংখ্য শিক্ষার্থীকে আমরা কী বলছি? তাদের বাবা মা পরিবার ও শিক্ষার্থীদের মনের কষ্টটাও তো আমাদের দেখতে হবে।  সেই সব অসংখ্য শিক্ষার্থীরা ভাবছে— আমাদের আর ভালো করার সুযোগ নেই। তাহলে আমরা কী বলবো তারা মেধাবি নয়? এটা হতে পারে না।’

নামি স্কুলগুলো সর্বোচ্চ মেধাবি বাছাই করে নিচ্ছে। কিন্তু সবার ফল কী ভালো হচ্ছে? তাতো না, সেখানেও হেরফের হচ্ছে। এসব বিদ্যালয়গুলো যদি এতই ভালো হয়, তাহলে তাদের নিজস্বতা কোথায়। তারা তো নিচ্ছেই ভালোগুলো।  যদি তারা সব রকমের শিক্ষার্থী নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ফল ভালো করতে পারে, তাহলে বলবো এই বিদ্যালয়গুলোর কৃতিত্ব রয়েছে। তারা অনেক ভালো করে শেখাতে পারছে।  ১০, ১১ বছর বয়সের একটি শিশুর যখন মেধার স্ফুরণ ঘটছে, তখন মেধাবি আর মেধাবি নয়, দুই ভাগে ভাগ করে ফেলবো, এটিকে একপেশে ভ্রান্তই বলবো। এতে কারও জন্য পথ খুলে দিচ্ছি, আর প্রকারন্তরে কারও জন্য পথ বন্ধ করে দিচ্ছি, এটা অমানবিক। তাছাড়া আমাদের শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আসছে। ’

শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘পৃথিবীর কোনও দেশে জাতীয় শিক্ষাক্রমের মধ্যে এত বৈষম্যমূলক পদ্ধতি থাকে না। বিদ্যালয় থেকে বিদ্যালয়ে এত বৈষম্য থাকে না। যাতে সাম্য নিশ্চিত হয়, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরাও যাতে ভালো প্রতিষ্ঠানে আসতে পারে। শুধু বেছে বেছে ভালো শিক্ষা নিয়ে প্রতিষ্ঠান ভালো থাকবে।  এটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা।  অসুস্থ প্রতিযোগিতা যদি উঠে যায়, তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি সচেতন হবে বলে আমরা মনে করি। ’