ভাস্কর্যকে মূর্তির সঙ্গে তুলনা উসকানির অপচেষ্টা: তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ (ছবি: ফোকাস বাংলা)

‘ভাস্কর্যকে মূর্তির সঙ্গে তুলনা করে বিভ্রান্তি ছড়ানো ও উসকানি দেওয়ার অপচেষ্টা পরিহার করতে বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

সোমবার (৩০ নভেম্বর) সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের আর সব দেশের মতো আমাদের দেশেও অনেকের ভাস্কর্য বহু বছর আগে নির্মিত হয়েছে। তখন কিন্তু কেউ প্রশ্ন উত্থাপন করেনি। এখন এটি নিয়ে প্রশ্ন করা মানে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা। আর আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছি, ভাস্কর্য আর  মূর্তির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভাস্কর্যকে মূর্তির সঙ্গে তুলনা করে সমাজকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’

পুরো পৃথিবী এমনকি যদি ইসলামি দেশগুলোর দিকে তাকাই, তাহলেও আমরা দেখতে পাই—ইরানে যেখানে ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে আয়াতুল্লাহ খোমেনির ভাস্কর্য আছে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘ইরাকেও রাস্তায় রাস্তায় ভাস্কর্য আছে। তুরস্কে ইসলামি ডানপন্থী দল ক্ষমতায়, সেখানেও প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ভাস্কর্য আছে। পৃথিবীর অন্যান্য ইসলামি দেশ, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নানা ভাস্কর্য, এমনকি সেখানকার শাসকদের ছবি-সংবলিত ভাস্কর্যও রাস্তায় রাস্তায় আছে।’

সৌদি আরবের উদাহরণ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি আরবে আমাদের মক্কা শরিফ, মসজিদে নববী অবস্থিত, সেখানে জেদ্দাসহ বিভিন্ন শহরে ঘোড়া, উট, এমনকি সৌদি প্রশাসকদের ছবি-সংবলিত ভাস্কর্য আছে। এছাড়া জেদ্দায় পৃথিবীর বিখ্যাত ভাস্করদের দিয়ে ভাস্কর্য বানিয়ে তৈরি করা হয়েছে স্কাল্পচার মিউজিয়াম, যার আরবীয় নাম হচ্ছে আল-হামরা। নারী-পুরুষ, জীবজন্তুসহ বহু কিছুর ভাস্কর্য সেখানে আছে।’

‘তুরস্কে কবি ফেরদৌসী, সেখ সাদী, হজরত জালাল উদ্দীন রুমীর ভাস্কর্য আছে, এমনকি সেখানে মসজিদের সামনেও ভাস্কর্য আছে’, বলেন হাছান মাহমুদ।

ভাস্কর্য একটি দেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতি- ইতিহাসের অংশ বলেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে সৌদি আরবেও কেউ প্রশ্ন তোলেনি।  আর যারা পাকিস্তানি ভাবধারায় এ নিয়ে প্রশ্ন করছেন, তাদের অতীত ইতিহাস ঘাঁটলে দেখতে পাবো, তাদের পূর্বপুরুষরা বা তারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের জন্য লড়াই করেছিলেন, কিংবা পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন। তাদের সেই সাধের পাকিস্তানে মোহাম্মদ আলীর জিন্নাহর ভাস্কর্য আছে, কবি ইকবালের ভাস্কর্য আছে, লিয়াকত আলী খানসহ আরও বহুজনের ভাস্কর্য আছে। সেখানেও কেউ কখনও প্রশ্ন তোলেনি।’

ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজরা শাসন ক্ষমতা নেওয়ার আগে উপমহাদেশে সরকারি ভাষা ছিল ফার্সি এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে উর্দু ভাষা চালু করা হয়েছিল। ইংরেজ শাসনের শুরুতে তারা ইংরেজি চালু করলো, সরকারি ভাষা হয়ে গেলো ইংরেজি। আজকে যারা ভাস্কর্য নিয়ে কথা বলছে, তাদের মতো অনেকেই তখন ইংরেজি শিক্ষাকে হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছিল। এই ফতোয়া দেওয়ার কারণে কিন্তু বহু বছর অনেক মুসলিম ইংরেজি শেখেনি। সে কারণে উপমহাদেশে মুসলিমরা চাকরিতে পিছিয়ে গিয়েছিল।’

ড. হাছান বলেন, ‘আবার যখন মানুষ চাঁদে গেলো, তখন অনেকে ফতোয়া দিয়েছিল—মানুষ চাঁদে গেছে এটি বিশ্বাস করা হারাম, শিরক। যখন টেলিভিশন চালু হলো, অনেকে টেলিভিশন দেখা হারাম বলেছিল। আবার অনেকে হজে যাওয়ার সময় ছবি দিয়ে দরখাস্ত করা যাবে না, এটা বলেও বিতর্ক তৈরি করা হয়েছিল। এখন যারা এসব কথা বলেন, তারা কিন্তু টেলিভিশনে বক্তব্য দেন, টেলিভিশনে তাদের বক্তব্য  গেলে তারা খুশি হন এবং তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নানা ধরনের পোস্ট দেন। ’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এসব কথা বলে সমাজকে বিভ্রান্ত করতে চায়, আমি আশা করবো, এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক, উসকানিমূলক বক্তব্য তারা পরিহার করবেন। এগুলো কখনও জনগণ মেনে নেয়নি, মেনে নেবে না। এসবের বিরুদ্ধে জনগণ বক্তব্য দিয়েছে। এ ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য যদি ক্রমাগতভাবে দেওয়া হতে থাকে, সেক্ষেত্রে সরকার নিশ্চয়ই বসে থাকবে না। বাংলাদেশে কোনও মৌলবাদের স্থান নেই, কোনও জঙ্গিবাদের স্থান নেই।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী জানান, তদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তিসাপেক্ষে অনলাইন নিউজ পোর্টালের নিবন্ধন একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এ নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই।