ডিসেম্বরের প্রথম দিন মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু

বিজয়ের মাসআজ ১ ডিসেম্বর। বিজয়ের মাস শুরু। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বিজয় এসেছিল বাংলায়। আমাদের জাতীয় জীবনে ডিসেম্বর নিয়ে এসেছে মুক্তির বার্তা। যে সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, তার চূড়ান্ত পর্যায় শুরু হয় ৩ ডিসেম্বর। মুক্তিবাহিনীর আঘাতে-আঘাতে বিপর্যস্ত পাকিস্তান প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সহায়ক রাষ্ট্র ভারতের পশ্চিম অঞ্চলে হামলা চালিয়ে সংঘর্ষ বাধায়। আর তার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত অধ্যায়।

বছর ঘুরে আজ আবারও এসেছে সেই ডিসেম্বর। স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন হৃদয়ে লালন করেছে বাঙালি যুগে যুগে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূরণ হয়েছিল সেই আজন্ম লালিত স্বপ্ন। স্বজন হারানো বেদনা এবং বিজয়ের সেই আনন্দকে বুকে ধারণ করে বিগত ৪৯ বছরে একটু একটু করে বদলে গেছে আমাদের স্বপ্ন— স্বদেশ ভূমি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে এখন বাংলাদেশ পৌঁছে গেছে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে।

এদিকে, এই বছর অনিবার্য কারণবশত 'পদক্ষেপ বাংলাদেশ' আয়োজিত "বিজয় মাসের প্রথম প্রভাত" অনুষ্ঠানটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে না। অনলাইনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী অনুষ্ঠানে যুক্ত হবেন এবং 'পদক্ষেপ বাংলাদেশ' এর কর্মকর্তাগণ কাঁটাবনস্থ অফিস থেকে যুক্ত হবেন।

ফিরে দেখা
১৯৭২ সালের ডিসেম্বরের এই দিনে বঙ্গবন্ধু পৌঁছান সুন্দরবন অঞ্চলের ছোট একটি জেলেপাড়ায়। প্রিয় নেতাকে অভিনন্দন জানাতে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে ছিল সেদিন গ্রামবাসীরা। বঙ্গবন্ধু তাদের কাছে গেলেন, জিজ্ঞেস করলেন তাদের কথা। তারা সেদিন জাতির পিতাকে কয়েকটি জরুরি সমস্যার কথা জানান। খাবার পানির স্বল্পতাসহ বেশকিছু বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে জেলা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু। টিকা সরবরাহের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিলেন তিনি এবং কিছু কম্বল বিতরণ করলেন গ্রামবাসীর মাঝে। সুন্দরবন অঞ্চলে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকবাহিনী যে নির্বিচার অত্যাচার চালিয়েছিল, সেসবের চিত্র বঙ্গবন্ধুর কাছে তুলে ধরলে তিনি তাদের সান্ত্বনা দেন। এসময় বঙ্গবন্ধুর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল একটি ছেলে। সে নিজে নিজেই বলতে থাকে— ‘আজ আমার জীবনের সাধ মিটলো। আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখলাম।’ বঙ্গবন্ধুও গ্রামবাসীকে দেখলেন। দেখলেন কী করে শুটকি মাছ করা হচ্ছে সেসবও।

বঙ্গবন্ধু১৯৭২ সালে ডিসেম্বরের ২ তারিখের পত্রিকায় প্রকাশিত হয় জেলে পাড়ায় কী অসম্ভব সুন্দর সময় কাটিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। দেশের মানুষকে পাশে পেলে তিনি অন্যরকম আনন্দিত হয়ে উঠতেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলে পাড়া থেকে বেরিয়ে বালিয়াড়ি দিয়ে নেমে আসার সময় কে একজন দেখালো, দূরে চরের ভেতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক জোড়া হরিণ-হরিণী। একটি গাছের আড়ালে গিয়ে দুচোখ ভরে সেই দৃশ্য দেখতে লাগলেন বঙ্গবন্ধু। আরও ভালো করে দেখার জন্য দূরবীনে চোখ রাখেন তিনি। ডিসেম্বরের স্বচ্ছ নীল আকাশের নিচে হরিণগুলো আনন্দে খেলা করছিল। একটু পরে বঙ্গবন্ধু আবারও যাত্রা শুরু করেন। উপকূলীয় বাঁধ প্রকল্প আর উপকূলীয় বনসম্পদ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ব্যবস্থা দেখতে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপকূল এলাকায় তিন দিনের সফরে গিয়েছিলেন।

পায়জামা-পাঞ্জাবি আর বঙ্গবন্ধু কোট পরা প্রধানমন্ত্রী সেদিন জাহাজ থেকে স্পিডবোটে করে ভেতরের দিকে পরিদর্শনে যান। যে দেশ ঘুরে দেখছিলেন সেদিন তিনি, মাত্র এক বছর আগে সেই দেশ ছিল রণাঙ্গন।

১৯৭১ সালের আজকের দিনে মুক্তিবাহিনী সিলেটের শমসের নগরে আক্রমণ চালিয়ে টেংরাটিলা ও দোয়ারাবাজার শত্রুমুক্ত করে। মুক্তিবাহিনীর অপারেশনের মুখে পাকিস্তানিরা সিলেটের গ্যরা, আলীরগাঁও ও পিরিজপুর থেকেও ব্যারাক গুটিয়ে নেয়। আর সেই সময় রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের এক মুখপাত্র ‘শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার শেষ হয়নি’ বলে বিবৃতি দেয়। ৪৯ বছর পার করে এসে সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের লক্ষ্যে।