এক নজরে পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতু (ছবি: ফোকাস বাংলা)মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া, মাদারীপুর জেলার শিবচর ও শরীয়তপুর জেলার জাজিরায় চলছে উৎসব। এটি স্বপ্ন বাস্তবায়নের উৎসব। দিনরাত কাজ চলছে এই তিন জেলাবেষ্টিত পদ্মা নদীর পাড়ে। সেখানে পুরোদমে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। সেতু নির্মাণের সব কাজ তদারকি করছে সেনাবাহিনী। সরকারের পরিকল্পনামাফিক আগামী ২০২২ সালের শুরুতেই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার কথা চূড়ান্ত হয়ে আছে। এ সেতু নিয়ে দেশের মানুষের আগ্রহ অনেক।পদ্মা সেতু (ছবি: ফোকাস বাংলা)

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে এই সেতুর মাধ্যমে।পদ্মা সেতু (ছবি: ফোকাস বাংলা)

বাংলাদেশের মতো উন্নয়ননশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হচ্ছে ইতিহাসের একটি বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে রয়েছে একটি একক রেলপথ। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর আববাহিকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যর ৪১টি স্প‌্যান বসানোর মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় এই সেতু। এটির জন্য প্রয়োজনীয় এবং অধিগ্রহণকৃত মোট জমির পরিমাণ ৯১৮ হেক্টর।পদ্মা সেতুতে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে সেনবাহিনী (ছবি: ফোকাস বাংলা)

প্রকল্প প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত কিছু লোকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিশ্বব্যাংক তার প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করে নেয়। অন্যান্য দাতাও সেটি অনুসরণ করে। পবর্তীতে দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এই ঘটনায় তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় ও সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়াকে জেলেও যেতে হয়েছিল। পরবর্তীতে এমন কোনও অভিযোগ প্রমাণ না পাওয়ায় কানাডিয়ান আদালত মামলাটি বাতিল করে দেয়।পদ্মা সেতু (ছবি: ফোকাস বাংলা)

বর্তমানে প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব সম্পদ থেকে অর্থায়ন করা হচ্ছে। এইকম’র ডিজাইনে পদ্মা নদীর ওপর বহুমুখী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প 'পদ্মা বহুমুখী সেতুর' নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০১১ সালে এবং শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। মূল প্রকল্পের পরিকল্পনা করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ২০০৭ সালের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্প পাস করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার এসে সেতুতে রেলপথ সংযুক্ত করে।পদ্মা সেতু (ছবি: ফোকাস বাংলা)

২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। পরবর্তীতে পদ্মা সেতুর ব্যয় আরও আট হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়। তখন পদ্মা সেতুর ব্যয় দাঁড়িয়েছিল সব মিলিয়ে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে এর ব্যয় আরও ১৪শ’ কোটি টাকা বাড়ে। ফলে পরবর্তীতে সেতুর মোট ব্যায় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হলো−

যা আছে পদ্মা সেতুতে−

১. পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প’।

২. পদ্মা সেতুর ধরন দ্বিতলবিশিষ্ট। এই সেতু কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে। (যা বিশ্বে প্রথম)।

৩. পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় (মূল সেতুতে) ৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

৪. ২০১৭-১৮ অর্থবছর পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরকারের বরাদ্দ ছিল ৫২৪ কোটি টাকা।

৫. পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

৬. পদ্মা সেতু নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড এর আওতাধীন চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি।

৭. পদ্মা সেতুতে থাকবে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ পরিবহন সুবিধা।

৮. পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন হচ্ছে স্প্যানের মধ্য দিয়ে।

৯. পদ্মা সেতুর প্রস্থ হবে ৭২ ফুট, এতে থাকবে চার লেনের সড়ক। মাঝখানে রোড ডিভাইডার।

১০. পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।

১১. পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটর।

১২. পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক দুই প্রান্তে (জাজিরা ও মাওয়া) ১৪ কিলোমিটার।

১৩. পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন হয়েছে দুই পাড়ে ১২ কিলোমিটার।

১৪. পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ করছে প্রায় চার হাজার মানুষ।

১৫. পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট পিলার ৮১টি।

১৬. পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা রয়েছে ৬০ ফুট।

১৭. পদ্মা সেতুর পাইলিং গভীরতা ৩৮৩ ফুট।

১৮. পদ্মা সেতুর মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি।

১৮. প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং হয়েছে ৬টি। তবে মাটি জটিলতার কারণে ২২টি পিলারের পাইলিং হয়েছে ৭টি করে।

১৯. পদ্মা সেতুর মোট পাইলিংয়ের সংখ্যা ২৮৬টি।

২১. পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে।

২২. সেতুটি নির্মিত হলে দেশের মোট জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।

আরও পড়ুন- 

উচ্ছ্বসিত-গর্বিত প্রকৌশলী ও কর্মীরা

পদ্মা সেতুর আরও যেসব কাজ বাকি

যুক্ত হলো পদ্মার দুই পাড়, স্বপ্নের সেতু দৃশ্যমান

১১৬৭ দিনে ৪১ স্প্যান

কোনও ব্যক্তি নয়, নদীর নামেই হবে ‘পদ্মা সেতু’

পদ্মা সেতুর ব্যয় বেড়েছে তিনগুণ