১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরার পরদিন থেকেই দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশের উন্নয়নে করণীয় এবং কর্মসূচি নিয়ে একের পর এক করেন সভা। তবে চলার পথে শুরুর মাস থেকেই সৃষ্টি হয় নানা বিপত্তি। চোরাকারবারি, কালোবাজারি, ডাকাতি থেকে শুরু করে স্বাধীনতা নস্যাৎ করতে চলতে থাকে একের পর এক ষড়যন্ত্র। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু বারবার হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন ‘রক্তার্জিত স্বাধীনতা নিয়ে কোনও ছিনিমিনি খেলা চলবে না’। বঙ্গবন্ধু বিভিন্নস্থানে ভাষণদানকালে এদের সমালোচনা করেন। কখনও ক্ষুব্ধ, কখনও হতাশায় নিমজ্জিত হন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ পুনর্গঠনে দলমত নির্বিশেষে সবার সহায়তার চেয়েও সমালোচনার মুখে পড়তে হয় বারবার। এক বছর ধরে ষড়যন্ত্রকারীদের নানা হুঁশিয়ারি দিয়ে ১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি জনসভায় বঙ্গবন্ধু আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাদের জাতীয় চরিত্র আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘এই অবস্থার মধ্যেও বাইরে থেকে মাল আনি, মাল দিই। কিন্তু সে মাল পেছন দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। বেশি দাম দিলে, একটা একটা করে সে মাল বের হতে থাকে।’
অথচ মাত্র একবছর আগে যখন ফিরেছিলেন দেশে, প্রথম বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, আমায় আপনারা পেয়েছেন আমি আসছি। জানতাম না আমার ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে, আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোড়া হয়েছিল। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম, বলেছিলাম আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান একবার মরে, দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম আমার মৃত্যু আসে যদি আমি হাসতে হাসতে যাবো, আমার বাঙালি জাতকে অপমান করে যাবো না, তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইবো না। যাবার সময় বলে যাবো জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।
ভাইয়েরা আমার যথেষ্ট কাজ রয়েছে, আমার সব জনগণকে দরকার। যেখানে রাস্তা ভেঙে গিয়েছে, নিজেরা রাস্তা করতে শুরু করে দাও। আমি চাই জমিতে যাও, ধান বুনো। কর্মচারীদের বলি, একজনও ঘুষ খাবেন না। মনে রাখবেন, তখন সুযোগ ছিল না, আমি অপরাধ ক্ষমা করবো না।
১৯ মে ন্যাপের প্রধান মোজাফফর আহমদের সভাপতিত্বে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আড়ৎদার, মজুতদার, মুনাফাখোর চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে শিগগিরই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এদেরকে অবশ্যই চরম আঘাত হানা হবে। এরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করার বিষয়ে তৎপর রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ শক্তির উৎস। দেশের মানুষ এদের প্রতিরোধ করবে।’
এই পরিস্থতিতে প্রথম বিজয় দিবস পালনকালে বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে দুষ্কৃতিকারী, ডাকাতি, রাহাজানি ঘটায় যারা সেই সমাজ বিরোধীদের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সংকল্প ঘোষণা করেন।
এ মাসের মধ্যে প্রত্যেক মহকুমায় রক্ষীবাহিনী যাবে। দুষ্কৃতিকারীদের ধরার বিষয়ে জনগণকে সহযোগিতা করতে হবে বলে ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু। চোরাচালান বন্ধের জন্য সীমান্তে যেমন সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে, তেমনি ডাকাতদের খতম করার জন্য দরকার হলে গ্রামে গ্রামে সেনাবাহিনী পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।