দীর্ঘ নয় মাসের বেশি সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কারাগারে বন্দি থাকার পরে দেশে ফেরার দিন কেমন লেগেছিল বঙ্গবন্ধুর? লন্ডনে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে, ফেরার পথে বিমানের সহযাত্রীদের অভিজ্ঞতায় তা বারবার বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু একবছর পরে ১৯৭৩ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন। ১৯৭৩ সালের এইদিনে তিনি ছিলেন নাটোরে। সেখানে তিনি ব্যক্ত করেন সেইদিনের অনুভূতি।
দৈনিক বাংলা পত্রিকার প্রতিনিধিকে বঙ্গবন্ধু বলেন, ১০ জানুয়ারি। আজ এই দিনে আমি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে আমার প্রিয় সোনার বাংলার মাটিতে ফিরে এসেছিলাম। আর আমি এটাকে বলতে পারি, এদিন আমার জন্য অবিস্মরণীয়। আমি অভিভূত। আমার এর থেকে বেশি কিছু বলবার নেই।
তাকে আরও একটু কিছু বলতে বলা হলে বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথের থেকে কয়েকটি ছত্র আবৃত্তি করে শোনান তিনি বলেন:
গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর, জীবন জুড়ালে তুমি।
অবারিত মাঠ, গগনললাট চুমে তব পদধূলি
ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি।
এক বছর আগে এদিনে তিনি পা রেখেছিলেন মুক্ত-স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মাটিতে। ইয়াহিয়া আর তার অনুসারীরা ২৫ মার্চের কালরাতে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে সকল যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল তাকে। সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালির জয় হলো, বাংলাদেশ হলো স্বাধীন। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে যে নাম সাড়ে সাত কোটি হৃদয়ে একটি মন্ত্র উচ্চারিত হয়েছে, যার কণ্ঠের বাণীকে বুকে লালন করে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলেছিল দামাল ছেলেটা সেই বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি ফিরে এসেছিলেন। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভের দিন থেকে দেশের জনগণ একটি সংবাদের জন্য উন্মুখ হয়েছিল, কবে মুক্ত স্বদেশে ফিরে আসবেন বঙ্গবন্ধু।