পরের বারান্দা থেকে নিজের ঘর হলো মরিয়মের

বিয়ের পর থেকে স্বামীর ঘর বলতে ছিল দেবরের বাড়ির বারান্দা। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মরিয়ম সেই বারান্দায় সংসার করেছেন ৫০ বছর। মাথা গোঁজার একটি স্থায়ী ঠিকানা করতে পারেননি খেটে খাওয়া এই দম্পতি। অবশেষে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পেয়ে তাই আবার নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন তারা।

মরিয়ম দম্পতির তিন ছেলে। তারা অন্য এলাকায় ভ্যান চালান। বিয়ে করে সেখানেই সংসার করছেন। বর্তমানে তার স্বামী বয়সের ভারে প্রায় নুয়ে পড়েছেন। তাই বেশি ভারী কাজ করতে পারেন না। অন্যের ক্ষেতে চাষ করে কিংবা দিনমজুরি করে কোনোমতে সংসার চলে তাদের।প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া ঘর

মরিয়ম বলেন, ‘মাথা গোঁজার ঠাঁই হইলো একটা। সরকার না দিলে কোনোদিন সম্ভব ছিল না ঘর করার।’

মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণে  ‘বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’। সেই লক্ষ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর দিচ্ছে সরকার।

মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সাতক্ষীরায় ৭৬৮টি পরিবার আসছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আওতায়। শনিবার (২৪ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের হাতে ঘরগুলো তুলে দেবেন। শ্যামনগরের ২০৫টি পরিবার এদিন ঘর পাবে। এদিন একসঙ্গে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমির মালিকানা দিয়ে বিনা পয়সায় দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী প্রদান করবেন। মরিয়মের মতো আরও যেসব পরিবার মাথার ওপর ছাদ পাচ্ছে, তারা সবাই উচ্ছ্বসিত।প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া ঘর

শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে ভারী কাজ করতে পারেন না এই উপজেলার ঈশ্বরিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম। সংসার চালাতে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন তিনি। সংসারে তার দুই ছেলেমেয়ে। প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো একটি কুঁড়েঘরে থাকতেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়ে শহিদুল বলেন, ‘আগে ঘরে থাকা, রান্না, খাওয়া দাওয়া নিয়ে খুব সমস্যা ছিল। এখন সেই কষ্ট দূর করসেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।’

৪৫ বছর বয়সী নুরন্নেসার স্বামী নেশার পেছনে খুইয়েছেন তার সম্বল। নিজের ঘর বলতে কিছু ছিল না তার। ১০ বছর আগে তার স্বামী মারা গেছেন। একটি মাত্র মেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতেন তিনি। বাসাবাড়িতে কাজ করে তার যে আয় তা দিয়ে সংসার চালান হিমশিম করে।

নিজের একটা ঘর পেয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছেন তিনি। নুরন্নেসা বলেন, ‘ঘর না পাইলে ক্যামনে জীবন চলতো জানি না। মেয়েটার বিয়েও দিতে হইবো। সরকার ঘর দেওয়ায় এখন একটু দুশ্চিন্তা দূর হইসে।’

প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা ছাড়াও ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৪টি প্রকল্প গ্রামে ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণের মাধ্যমে তিন হাজার ৭১৫টি পরিবারকে সেখানে পুনর্বাসন করা হবে।

আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে পাওয়া তথ্যে আরও জানা গেছে, ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, যা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিন লাখ ২০ হাজার ৫২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০২০ সালের জুনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীন আট লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে।