সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহারে কমিটি

বাংলা ছাড়া ফাইল দেখবেন না বঙ্গবন্ধু

সিদ্ধান্ত হয়, বঙ্গবন্ধুর কাছে কোনও ফাইল পেশ করতে হলে তা বাংলায় লিখতে হবে। ১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। যারা সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার বাস্তবায়নে কাজ করবেন।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, অফিসের নথি ও অন্যান্য কাগজপত্র বাংলায় না লেখা হলে তার কাছে উপস্থাপন করা যাবে না। সুতরাং যাবতীয় সরকারি নথিপত্র বাংলায় লেখার জন্য কেবিনেট ডিভিশন পরিপত্রে সকল মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানায়।

আরও জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সরকারি কাগজপত্রে বাংলা ব্যবহার করতে কয়েক দফা নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও বাংলার ব্যবহারে বাস্তব উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে পরিপত্রে অভিযোগ করা হয়েছিল। পরিপত্রে এ ব্যাপারে অবিলম্বে আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়। এতে বলা হয়, যেসব মন্ত্রণালয়ের কাগজপত্র বাংলায় লেখা হচ্ছে না সেগুলোকে বাংলায় অনুবাদ করিয়ে নিতে হবে এবং বাংলায় লিখতে হবে।

বাংলা প্রচলন কমিটি

বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহার করার পথে বিভিন্ন সমস্যা জরুরি ভিত্তিতে দূর করার লক্ষ্যে শিক্ষামন্ত্রীকে সভাপতি নির্বাচিত করে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। বিশেষ সূত্রের বরাত দিয়ে দৈনিক বাংলা ১৯৭৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি করা প্রতিবেদনে জানায়, কমিটির দায়িত্ব হচ্ছে সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার যথাযথ প্রয়োগের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প তৈরি ও অনুমোদিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। এ ছাড়াও সরকারি অফিসে বাংলার ব্যবহার ও অবিলম্বে বাংলা লিখন পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করতে হবে। প্রচলিত বিভিন্ন ফরম বাংলা ভাষায় মুদ্রণ, কার্যোপযোগী ও সহজবোধ্য পরিভাষায় জরুরি ভিত্তিতে প্রণয়নও করবে কমিটি।

বঙ্গবন্ধু সভা সমাবেশসহ নানা জায়গায় নির্দেশনা, ঘোষণা দিলেও এক ধরনের গড়িমসি দেখা যাচ্ছিল বলেই কমিটি করে দেওয়া হয়েছিল।

কেবল এই কমিটি গঠনই নয়, এর আগে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বারবারই বলা হচ্ছিল সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার এখনও নিশ্চিত হয়নি। এই দাবি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জোরালোভাবে উঠেছিল। এতে ভূমিকা রেখেছিলেন সে সময়ের ছাত্রনেতারা।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ২০ জানুয়ারি প্রথমবার সর্বস্তরে বাংলা নিশ্চিত করতে ছাত্রনেতারা চাপ দেন। এক বিবৃতিতে নেতারা দাবি তুলেছিলেন, বাংলা, ইংরেজি, উর্দু ভাষায় পরিচালিত বিদ্যালয়ে ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলা চালু হতে হবে। ফেব্রুয়ারি মাসে সেটি মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

বিজয় লাভের প্রায় পঞ্চাশ বছর পরেও সেই বিবৃতিতে স্বাক্ষর দেওয়া সে সময়ের ছাত্রনেতারা বলছেন, রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে ব্যবহার না করে বাংলা ভাষাকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে।