প্যারেড গ্রাউন্ডে স্বমহিমায় উজ্জ্বল বঙ্গবন্ধু

১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীর দিন। শুধু জন্মবার্ষিকী নয়, আজ শততম জন্মবার্ষিকীর উদযাপন চলছে দেশজুড়ে। উদযাপনের মূল আয়োজন ছিল জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে। পাশাপাশি আজ শিশু দিবস। তাই উদযাপনের আয়োজনে বাংলার সংস্কৃতি, শিশুদের সম্পৃক্ততার পাশপাশি ছিল দুই বাংলার মেলবন্ধনের কীর্তি। পুরো অনুষ্ঠান জুড়েই ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার জীবন সংগ্রাম, দেশের প্রতি তার অবদান আর স্বাধীন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাণ্ডারি হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পুরো আয়োজনে।   

5‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আজ (১৭ মার্চ) থেকে শুরু হচ্ছে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে এটি আয়োজন করেছে মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও নাট্যঅভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর।

এই আয়োজনে বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে তৈরি বিশেষ আয়োজনস্থলে এসে পৌঁছান মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ ও তার সহধর্মিণী ফাজনা আহমেদ। এ সময় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানান। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।

4এরপর সম্মানিত অতিথিকে নিয়ে মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন তারা। এর আগে শত শিশুর কণ্ঠে গাওয়া হয় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ পাঠের মাধ্যমে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। পাঠ শেষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মিত অ্যানিমেটেড তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এরপর দেশবরেণ্য শত শিল্পীর কণ্ঠে গাওয়া মুজিববর্ষের থিম সং ‘তুমি বাংলার ধ্রুবতারা, তুমি বাংলার বাতিঘর’ প্রদর্শিত হয়। এই গানে শিল্পীদের পাশাপাশি কণ্ঠ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা। গানটি লিখেছেন কবি কামাল চৌধুরী এবং সুর দিয়েছেন নন্দিত কণ্ঠশিল্পী ও সুরকার নকীব খান।

অনুষ্ঠানে এরপর বিমান বাহিনীর ফ্লাইটপাস্টের একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয় যেখানে বিমান বাহিনীর চৌকশ সদস্যরা আকাশে শ্রদ্ধা জানান বঙ্গবন্ধুকে। এরপর একে একে বক্তব্য রাখেন আয়োজনের মূল অতিথিরা।

3মুজিব জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন,  বাঙালি জাতি এক হতভাগ্য জাতি। শত শত বছর বহিরাগতদের দ্বারা শাসিত শোষিত লাঞ্ছিত থেকেছে। পাকিস্তানে যে অবস্থা আমাদের কেটেছে তার তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের ভোলার কথা নয়। এর হাত থেকে বাঙালিকে মুক্ত করার জন্য একজন মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটলো, তার নাম শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি তার আজীবন প্রয়াসে বাঙালিকে শোষণমুক্ত করলে। বিনিময়ে তাকে তার পরিবারসহ জীবন দিতে হল। কিন্তু তিনি অমর হয়ে গেলেন। তার সবচেয়ে বড় অবদান তিনি আমাদেরকে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র উপহার দিয়ে গেছেন।

2অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্রের প্রধানরা ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্যের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অবদানকে স্মরণ করেন। এর মধ্যে আছেন-চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে শুগা। এছাড়া ভিডিও বার্তায় আরও শুভেচ্ছা জানান বিশিষ্ট সাংবাদিক স্যার মার্ক টালি। এরপর বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ। তিনি মালদ্বীপে অবস্থিত বাংলাদেশি প্রবাসীকর্মীদের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত করেন। একইসঙ্গে মালদ্বীপের অর্থনীতিতে প্রবাসীকর্মীদের অবদানের প্রশংসা করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ,  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ’র হাতে ‘মুজিব চিরন্তন শ্রদ্ধাস্মারক’ তুলে দেওয়া হয়। এই স্মারকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাঙালি জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতার চিরন্তন প্রতীক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক তর্জনী। জাতির পিতার পরিবারের সদস্য এবং পৃথিবীর সব শান্তিকামি মানুষের প্রতীক হিসেবে এই স্মারকে আছে ৯টি উড়ন্ত পায়রা। আর এতে সংরক্ষণ করা হয়েছে টুঙ্গিপাড়ার মাটি। স্মারকটি নির্মাণ করেছেন শিল্পী সব্যসাচী হাজরা। অতিথিদের হাতে স্মারক তুলে দেন  মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।     


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার পর অনুষ্ঠানের প্রথম ভাগ শেষ হয়।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়ভাগ শুরু হয় মনোজ্ঞ থিয়েটার পারফরমেন্সের মাধ্যমে। এই পারফর্মেন্সে বঙ্গবন্ধুর জীবন সংগ্রামের যৌবনকাল থেকে শুরু করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তুলে ধরা হয়। আর এরই ফাঁকে ভারতের সঙ্গীতজ্ঞ দেবজ্যোতি মিশ্র ও তার দলের বাদ্যযন্ত্র সহযোগে অর্কেস্ট্রা মিউজিকের সঙ্গে গান পরিবেশনা করবেন দেশের খ্যাতমান শিল্পীরা। তারা বঙ্গবন্ধুর প্রিয় সব গান পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে সাদি মোহাম্মদ, রফিকুল আলম, সৈয়দ আব্দুল হাদি রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, শিমুল ইউসূফ সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

শোন একটি মুজিবুরের থেকে লক্ষ মুজিবুরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে... বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ – সংগীতের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে ভারতীয় শিল্পীদের দল। ভারতের খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী মমতা শংকরের পরিচালনায় তার দল এই নৃত্য পরিবেশন করে। ভারতের এই শিল্পীদের আয়োজনের অংশের শুরুতেই দু’দেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলার মাটি , বাংলার জয়’ গানের সঙ্গে পরিবেশন করেন মনমুগ্ধকর নৃত্য। এরপর একে একে সলীল চৌধুরীর গান ‘ধিতাং ধিতাং বলে’ , রবীন্দ্রনাথের ‘আলোর অমল কমল কে ফুটালে’ এবং সবশেষে শোন একটি মুজিবুরের থেকে লক্ষ মুজিবুরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণি... বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন ভারতীয় শিল্পীরা। 

এরপর জয়ঢাক সহযোগে বিশেষ পরিবেশনা নিয়ে শেষ হয় সাংস্কৃতিক আয়োজন। এরসঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় আকাশে বর্ণিল আতশবাজি এবং লেজার শো। পাশপাশি শিশুদের হাতে উড়ানো হয় বেলুন।