করোনা সংক্রমণ নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের ভিডিও বার্তা

করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পাঁচ মিনিটের এ ভিডিও বার্তাটি তিনি আপলোড করেন।

ওবায়দুল কাদেরের ভিডিও বার্তায় দেশ-বিদেশে করোনার সর্বশেষ চিত্র উঠে এসেছে। উঠে এসেছে প্রাণঘাতী করোনায় বিশ্বের মানুষের অসহায়ত্বের কথা। উঠে এসেছে লকডাউন নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের নানা প্রবণতার কথা। স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে উদাসীনতার কথা। রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে করোনা যুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা।

বিধ্বংসী আলোড়ন তুলে এসেছে করোনা

ভিডিও বার্তায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সুনামির মতো বিধ্বংসী আলোড়ন তুলে করোনা এসেছে পৃথিবীজুড়ে। কোভিডে আজ কাঁপছে সারা পৃথিবী। কাঁপছে আমেরিকা, কাঁপছে ল্যাটিন আমেরিকা, কাঁপছে আফ্রিকা, কাঁপছে এশিয়া। ভারত কাঁপছে। কাঁপছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।’

তিনি বলেন, ‘জীবনের এক অচিন্তনীয় অবিশ্বাস্য কঠিন লড়াই, জরুরি শয্যার জন্য দুনিয়াজুড়ে হাহাকার। সম্মুখ সারির যোদ্ধারা সামাল দিতে হিমশিম। দেশে দেশে সংক্রমণ কেবল বাড়ছেই। বাড়ছে মৃত্যুর হার। কত আপন মানুষ এরইমধ্যে করোনার করাল গ্রাসে চিরদিনের মতো বিদায় নিয়েছে এই আলোছায়ার সুন্দর পৃথিবী থেকে। সন্তান হারানোর কান্না, স্বামী হারানো নবধূর ফরিয়াদে, বোন-হারা ভাইয়ের আর্তনাদে সারা পৃথিবীর আকাশ ভারী। নতুন নতুন ধরনে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে করোনা।’

ঘুম ভাঙলেই নতুন নতুন মৃত্যু আর সংক্রমণের খবর

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুল মতিন খসরুর মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘এই তো সেদিন আমাদের কাছের মানুষ মতিন খসরুর শেষ বিদায়ের বিষাদ সংবাদ পেলাম। একদিনেই সর্বোচ্চ ৯৬ জন চলে গেলো মৃত্যুর মিছিলে। সকালে ঘুম ভাঙলেই নতুন নতুন মৃত্যু আর সংক্রমণের খবর। জীবনের যারা কাছের মানুষ, প্রাণঘাতী প্যানডেমিক তাদের কত দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। এ রোগীদের কাছে আসতে ভয়। ফুল জোটে না কফিনে। মৃতের সৎকারেও আপন মানুষেরা কাছে ভেড়ে না। দূর থেকে শুধু নিঃসীম শূন্যতায় হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়।’

সারা দুনিয়ায় লকডাউন চলছে

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের লোকজনের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে সারা দুনিয়ায় আজ লকডাউন চলছে। চলছে রাত্রিকালীন কারফিউ। পৃথিবীজুড়ে গরিব আরও গরিব হচ্ছে। বাড়ছে নিঃস্ব মানুষ। ভাসমান মানুষ। বাড়ছে কর্মহীন বেকারদের দীর্ঘ মিছিল। বাংলাদেশে লকডাউন মানতে চায় না মানুষ। মাস্ক পরতেও নিদারুণ অনাগ্রহ। স্বাস্থ্যবিধির প্রতি সাংঘাতিক অবহেলা। ভ্যাকসিনেও হার মানছে না করোনা। ভয়ংকর ভাইরাসকে হারাতেই হবে। স্বাস্থ্যবিধির শানিত হাতিয়ারই কেবল হারাতে পারে প্রাণঘাতী করোনাকে।’

মানুষ সর্বত্র বেপরোয়া

তিনি বলেন, ‘করোনা দিনে দিনে হয়ে উঠছে আরও হিংস্র। আরও প্রতিশোধপরায়ণ। তবু মানুষ সর্বত্র বেপরোয়া। রাস্তায়, হাটে বাজারে, ফেরিঘাটে বেপরোয়া মানুষদের ছুটন্ত মিছিল চোখে পড়ে প্রতিদিন। সরকারি বিধিনিষেধ পুরোপুরি মানছে না মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক আহ্বানেরও উপেক্ষা। নানা ফাঁকফোকরে শহর থেকে গ্রামের দিকে অনিশ্চিত অভিযাত্রার যেন বিরাম নেই। অপ্রয়োজনে ঘোরাঘুরির প্রবণতাও অপ্রতিরোধ্য।’

সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কাদের, ‘আসুন আমরা এই অদৃশ্য শত্রু করোনার বিরুদ্ধে ঘরে ঘরে সচেতনতার দুর্গ গড়ে তুলি। সম্মিলিত শক্তি দিয়ে আসুন আমরা পরাজিত করি প্রাণঘাতী করোনাকে। সময়ের সাহসী কাণ্ডারী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিজয়ী হই।’

সরকারকে ফাঁকি দিলেও করোনাকে ফাঁকি দেওয়া যায় না

মানুষকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘ভুলে গেলে চলবে না, সরকারকে ফাঁকি দিলেও করোনাকে ফাঁকি দেওয়া যায় না। সামান্য উদাসীনতায় অকাল মৃত্যু অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। করোনা এখন তরুণদেরও ছাড়ছে না। করোনার ভয়াল গ্রাস থেকে ধনী-দরিদ্র, বড় ছোট কারও রেহাই নেই।’

দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এখন আর কোনও রাজনীতি নয়। এখনকার রাজনীতি হচ্ছে সচেতনতার দুর্গ গড়ে তোলা। করোনাকে প্রতিরোধ করা। আসুন আমরা দল-মত, শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে আমাদের সবারই সুরক্ষার স্বার্থে করোনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হই। জয় আমাদের হবেই।’