‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তিতে আপত্তিকর কিছু নেই’

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২০ এপ্রিলের ঘটনা।)

১৯৭৩ সালের এই দিনে জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন বলেছেন, মানবিক সমস্যাবলীর সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথ গঠনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশ্ব তাকে একটি বলিষ্ঠ ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ অভিনন্দিত করেছে। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন নির্ভর করছে মানবিক সমস্যা সমাধানে কিরূপ মনোভাব নিয়ে পাকিস্তান এগিয়ে আসে, তার  ওপরে।

বাসসের খবরে বলা হয়, জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর অংশগ্রহণকালে এই অভিমত ব্যক্ত করেন। মন্ত্রী তার ভাষণে অমীমাংসিত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জনের কাজের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময়ই মানবিক সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে খুবই সচেতন।’ তিনি উল্লেখ করেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে, পাকিস্তানের নিজ স্বার্থে বাস্তবতাকে মেনে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা উচিত ছিল। এখনও পাকিস্তান অনুধাবন করতে পারেনি। এভাবে বাস্তবতাকে অস্বীকার করার অর্থই হচ্ছে— সমস্যা সমাধানের পথে বাধা সৃষ্টি করে রাখা।

১৯৭৩ সালের ২১ এপ্রিল প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকাএদিকে ভারতীয় প্রতিনিধিকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। উপমহাদেশের মানবিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বাংলাদেশ-ভারত যে যৌথ প্রস্তাব দিয়েছে, সে সম্পর্কে বিশদ আলোচনার জন্য পাকিস্তান ভারত সরকারের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। ডিপিএ ও এপি পরিবেশিত করাচির খবরে এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

উপমহাদেশের মানবিক সমস্যাবলীর সমাধানে অগ্রগতির পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারত পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দান এবং বাংলাদেশে অবস্থানকারী পাকিস্তানের জনগণকে ফেরত পাঠানোর চূড়ান্ত প্রস্তাব দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টো আজও  (২০ এপ্রিল) তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও পরামর্শদাতাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দিল্লি সফর শেষে মঙ্গলবার  বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ঘোষণা প্রকাশিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ভুট্টো বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রস্তাব নিয়ে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী, উপদেষ্টা ও সামরিক প্রধানের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন। ইসলামাবাদ থেকে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ভুট্টো সকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল টিক্কা খান ও অন্যান্য পদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

১৯৭৩ সালের ২১ এপ্রিল প্রকাশিত দ্য বাংলাদেশ অবজারভার৮৮ হাজারের বেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার

১৯৭৩ সালের এই দিনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিল সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলোচনায় বলেন, ‘১৯৭২ সালের মার্চ থেকে ১৯৭৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ৮৮ হাজার ৩৭৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বেচ্ছায় জমা দেওয়া মুক্তিবাহিনীর অস্ত্রও রয়েছে। জমা দেওয়ার মধ্যে রয়েছে— ৫৫ হাজার ৫০৮টি ৩০৩ রাইফেল। এছাড়া ৭ হাজার ৭০৩টি এসএলআর, দুই হাজার  ৫৫৩ স্টনগানসহ বেশকিছু গোলাবারুদ।’

আব্দুল মালেক উকিল বলেন, ‘দালালির মামলা বাছাই ও তদন্ত করার জন্য জেলা স্ক্রিনিং বোর্ড গঠন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মহাকুমাকে জেলা ধরা হবে। এই হিসাবে জেলার সংখ্যা হবে ৬০টি।’ 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জেলা স্ক্রিনিংয়ের আহ্বায়ক হবেন ডেপুটি কমিশনার। কোনও ব্যক্তিকে অযথা হয়রানির হাত থেকে নিষ্কৃতি দিয়ে সত্যিকার দালালদের বিচার করাই এর লক্ষ্য।’

তিনি বলেন, ‘প্রায় ২৯ হাজার লোক দালালির অভিযোগে আটক রয়েছে। প্রায় ১২ হাজার দালালি মামলার বিচার শুরু হয়েছে।’

১৯৭৩ সালের ২১ এপ্রিল প্রকাশিত পত্রিকার শিরোনামযুক্তরাষ্ট্রের দুই কূটনীতিক নয়াদিল্লিতে

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দুই কূটনীতিক ভারত-মার্কিন সম্পর্ক উন্নয়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ থেকে কাঠমান্ডু হয়ে নয়াদিল্লি পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, তারা কোনও নির্দিষ্ট আলোচ্যসূচি নিয়ে আসেননি। মার্কিন কূটনীতিকরা বলেন, তবে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করতে চাই। দুই দিনের সফরে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জোসেফ সিসকোও ছিলেন।