জলবায়ু সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্তদের কথা বলবে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্যোগে ৪০টি দেশ নিয়ে এপ্রিলের ২২-২৩ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের অংশগ্রহণের জন্য প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত জন কেরি ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে গেছেন। ওই সম্মেলনে বাংলাদেশ শুধু নিজের কথা বলবে না, একই সঙ্গে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের চেয়ারম্যান হিসেবে অন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে কীভাবে সহায়তা করা যায় সে বিষয়েও আলোকপাত করবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু আমাদের কথা বলবো না, আমরা অন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর কথাও বলবো। তাদের ক্ষেত্রে কী সহায়ক ভূমিকা নেওয়া যায়, সেটি আমরা তুলে ধরবো।’

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কথা বলবেন এবং যেসব দেশ বেশি জলবায়ু দূষণ করছে তাদের কথা আমরা শুনবো, বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। ‘এছাড়া গ্লাসগোতে জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন এ বছর হবে। সেটিকে মাথায় রেখে নতুন উদ্যোগ আসতে পারে।’

সচিব বলেন, জলবায়ু প্রশমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বীকৃতি আছে এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের চেয়ারম্যান এখন বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা অনেকে দেখতে চায়। এই প্রেক্ষাপট থেকে আমাদের অংশগ্রহণ হবে।

বাংলাদেশ কি চায়
বাংলাদেশ চায় ২০১৬ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি যেন উন্নত বিশ্বের দেশগুলো মেনে চলে। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ওই চুক্তিতে উন্নত বিশ্ব যারা দীর্ঘদিন ধরে দূষণ করেছে, তাদের কিছু প্রতিশ্রুতি আছে। এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের আবার ফেরত আসাটাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘প্যারিস চুক্তিতে ১০০ বিলিয়ন ডলারের একটি বিষয় ছিল এবং ওবামা প্রশাসন সেটির একটি অংশ দিয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন বাকিটা দেয়নি। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন তারা বাকিটা দিয়ে দেবেন এবং নতুন কিছু তারা করবেন। আমরা আশা করি, অন্য দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে এগিয়ে আসবে।’

ভারসাম্য
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা যেটি সবসময় বলি সেটি হচ্ছে অ্যাডাপটেশন ও মিটিগেশনের মধ্যে একটি ভারসাম্য। আমরা জলবায়ু দূষণ তেমনভাবে করি না এবং এরফলে মিটিগেশনের জন্য যদি বেশি বিনিয়োগ আসে, তবে সেটি বেশি কার্যকরি হবে না। অন্যদিকে এখানে অ্যাডাপটেশনের কাজ অনেক বেশি। এই দুইয়ের মধ্যে একটি সুসম ভারসাম্য যেন থাকে সেটিই আমরা চাই।’

অন্য বিষয়ের মধ্যে ‘লস অ্যান্ড ডেমেজের’ বিষয়টি তুলে ধরা হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘অনেক দেশ বিষয়টি মেনে নেয় না। কিন্তু আমরা মনে করি যে, কিছু কিছু দেশের কার্যকলাপের কারণে অন্য দেশের ক্ষতি হয়েছে। সুতরাং এই বিষয়টি আমরা আলোচনায় রাখতে চাই। হয়তো এখনই এর ফল নাও পেতে পারি, কিন্তু আমরা আলোচনাটি চালিয়ে যেতে চাই।’

জাতীয় স্বার্থ
বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যেমন সুন্দরবনে রামপালের অনেকে বিরোধিতা করেছেন, এ প্রসঙ্গে সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে এর অগ্রাধিকার নির্ধারিত হবে। সুতরাং যেসব দেশ গত একশ’ বা দুইশ’ বছর ধরে দূষণ ছড়িয়েছে, তারা এখন যে স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলে, সেটি মেনে নিতে আমরা বাধ্য না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দূষণের পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য। আমরা আমাদের ব্যবস্থা নিজেরাই নিচ্ছি। বাংলাদেশ অনেক আগেই ক্লাইমেট তহবিল নিজেদের অর্থায়নে চালু করেছে। কেউ যদি আমাদের সাহায্য করতে চায়, তবে আমরা স্বাগত জানাবো।’

গ্রিন এনার্জি, বায়োগ্যাস, সৌরশক্তি বা এনার্জি কম খরচের অনেক পদ্ধতি রয়েছে, যা আমাদের জন্য সহায়ক হবে। এরজন্য বিনিয়োগ লাগবে এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়গুলো সামনে চলে আসবে বলে জানান তিনি।