নির্দেশ অমান্যকারী ব্যবসায়ীদের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা!

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২ এপ্রিলের ঘটনা।)

সরকার অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য ১৯৭৩ অনুযায়ী অত্যাবশ্যক আমদানিকারক বিক্রেতা ও উৎপাদকদের প্রতি তাদের ব্যবসা জায়গায়মূল্য তালিকা প্রদর্শন এর নির্দেশ দেন। বাসস জানায় অমান্যকারীদের তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

সরকার অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের আমদানিকারক বিক্রেতা ও উৎপাদকদের অবিলম্বে মূল্য তালিকাপ্রদর্শন এর বিষয় পুনরায় আর একবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। অন্যথায় অত্যাবশ্যকীয় ১৯৭৩ অনুযায়ী নির্দেশ অমান্যকারী তিনবছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য যেমন কাপড় সিমেন্ট লোহা ও ইস্পাত দ্রব্যখাদ্য যন্ত্র চালিত যানবাহন ও তার অংশ টায়ার টিউব বাইসাইকেল বাইসাইকেল এর টায়ার, সিগারেট, ড্রাইসেল ব্যাটারি, স্যানিটারি ফিটিংস, নারিকেল তেল, রেজার, টুথপেস্ট বৈদ্যুতিক মালামাল যেমন ফ্যান রেডিও ট্রানজিস্টার টেলিভিশন প্রভৃতি বিক্রেতা পাইকারি ও খুচরা যেকোনো ধরনের বিক্রেতা হোক না কেন আমদানিকারক বা উৎপাদকের বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের পরিমাণসহ সুস্পষ্টভাবে এর মূল্য তালিকা প্রদর্শন করতে হবে।

সরকার জানতে পেরেছে যে বহু ডিলার উৎপাদক ও আমদানিকারক উপরেল্লিখিত আদেশ মেনে চলছে না সরকার আর এটা বরদাস্ত করতে পারে না। ইতিমধ্যেই কতিপয় ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং ঢাকা শহরের ১৭০জন ব্যবসায়ী কেতাদের ও নিয়মানুবর্তিতা সংশোধন করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের ডিলারশিপ লাইসেন্স বাতিল করা হবে। অন্যান্য আদেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আগে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

পাকিস্তান সাড়া দেয়নি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী এইদিনে বলেন যে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের যুদ্ধ জনিত মানবিক সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও ভারত অত্যন্ত উদার প্রস্তাব দিয়েছিল কিন্তু দুঃখের বিষয় পাকিস্তান সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কিছুই করেনি। এইদিন সকালে তিনদিনের সফরে শ্রীলঙ্কা যাওয়ার প্রাক্কালে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন যে পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রস্তাবে গোপন কিছু নাই সুতরাং এ ব্যাপারে পাকিস্তানের ব্যাখ্যা চাওয়ার কারণ বুঝতে তিনি অক্ষম।

আটক বাঙালি উদ্ধারে উদ্যোগী হন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২জন শিক্ষক বিশ্ব বিবেকের প্রতি পাকিস্তানি আটক নিরীহ বাঙ্গালীদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে পাকিস্তানকে বাধ্য করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। বাসসের খবরে প্রকাশ ১৯৭৩ সালের এইদিন এক যুক্তবিবৃতিতে তারা বলেন যে বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য দায়ী পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও আটক বাঙ্গালীদের ফেরত পাঠানোর মধ্যে কোনো সম্পর্ক না থাকলেও বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলে পাকিস্তান বাঙ্গালিদের বিচার করবে বলে বারবার হুমকি দিচ্ছে। শিক্ষকবৃন্দ বলেন যে, আটক বাঙালিরা অত্যন্ত দুঃখ দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে এবং বিশ্বের প্রতিটি বিবেক সম্পন্ন লোক বাঙ্গালিদের ব্যাপারে পাকিস্তানের ভূমিকায় দুঃখ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে অন্যান্যদের মধ্যে সাক্ষর করেন ড. আবু মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ, ড. মনিরুজ্জামান, আব্দুর রাজ্জাক, নূর মোহাম্মদ মিয়া, সাদ উদ্দিন, হাসানুল হক ডক্টর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।