অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের এইদিন এক নির্দেশনামা জারি করেন। এতে অসৎ ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন বিভাগকে লাইসেন্স পারমিট ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়।

বাসস ও এনা পরিবেশিত খবরে বলা হয়, কালোবাজারির জিনিসপত্র বিক্রিসহ বিভিন্ন অসাধু কার্যকলাপে লিপ্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। দোষীদের লাইসেন্স পারমিট ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাতিল করে দেওয়া হবে এবং দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী মামলাও দায়ের করা হবে বলে নির্দেশনায় প্রকাশ করা হয়।

এদিন সকালে বঙ্গবন্ধু উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে এ নির্দেশনা জারি করেন। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দু'ঘণ্টাব্যাপী সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বাণিজ্যমন্ত্রী এইচ এম কামরুজ্জামান, সমবায়মন্ত্রী মতিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যোগদান করেন।

image0 (13)স্বাধীনতার পর থেকে কালোবাজারি, মুনাফাখোর, পারমিট লাইসেন্স বিকৃতির মাধ্যমে কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে তুলেছে। ফলে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কাউকে শোষণ করতে দেওয়া হবে না- বঙ্গবন্ধুর এই নীতি অনুসারে এইদিন নির্দেশনা জারি করা হয়।

সাভারে নির্মাণাধীন স্মৃতিসৌধ দেখতে যান বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদিন সন্ধ্যায় সাভারে নির্মাণাধীন জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করেন। বাসসের খবরে প্রকাশ, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন উত্তর নগর উন্নয়নমন্ত্রী সোহরাব হোসেন, আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কোরবান আলী, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণকাজের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন।

বঙ্গবন্ধুর বিশেষ দূত কলকাতায়

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুজন বিশেষ দূত উত্তর আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সফরের পথে ঢাকা থেকে কলকাতা পৌঁছান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দুজন বিশেষ দূত হলেন বাংলাদেশের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী এম আর সিদ্দিকী ও পররাষ্ট্র দফতরের একজন পদস্থ অফিসার আতাউর রহমান। তারা এসব দেশ সফর করে উপমহাদেশের সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্দেশ্যে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগের পক্ষে জনমত সংগ্রহ করবেন। দমদম বিমানবন্দরে পৌঁছে তারা সাংবাদিকদের বলেন যে পশ্চিম ইউরোপ উত্তর-আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সফরে গিয়ে তারা সেসব সরকার প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। তাদের জন্য তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পত্র নিয়ে যাচ্ছেন।

একই উদ্দেশ্যে আরও তিনজন বিশেষ দূতকে দূরপ্রাচ্য আফ্রিকা ও পূর্ব ইউরোপের দেশ সফরে পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদস্য শামসুল হক দক্ষিণ-পূর্ব দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোর সফরে রওনা হবেন। এ ছাড়া আরও দুজন বিশেষ দূত ফখরুদ্দিন আহমেদ ও মহিউদ্দিন আহমেদ পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলো সফরে যাবেন। দমদম বিমানবন্দরে বাংলাদেশের বিশেষ দূত আতাউর রহমান বলেন, দেশে দেশে গিয়ে সেখানকার সরকার প্রধান ও জনগণকে বুঝিয়ে দেবেন যে উপমহাদেশের কয়েক লক্ষ মানুষের মানবিক সমস্যা সমাধানের জন্য ভারত-বাংলাদেশ গভীর আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগ একান্তই মানবিক। কিন্তু পাকিস্তান তাতে সাড়া দিচ্ছে না। বরং তারা বৈরী নীতি অব্যাহত রেখেছে।

পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রতিহিংসার জন্য আমরা যুদ্ধাপরাধীর বিচার করছি তা নয়। পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধীরা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। তার জন্য তাদের বিচার করে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছি আমরা। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের বিচার করা বাংলাদেশের একটি নৈতিক দায়িত্ব। একটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশে তার নৈতিক দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না।