স্বীকৃতির আগে ভুট্টোর সঙ্গে বৈঠক নয় : বঙ্গবন্ধু

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৩ মে’র ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের এই দিনে বলেন, সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ যৌথ ঘোষণা বিশ্বব্যাপী অভিনন্দিত হয়েছে। বিপিআই’র খবরে বলা হয়, এইদিন বিকালে গণভবনে নরওয়ের ব্রডকাস্টিং করপোরেশন-এর প্রতিনিধির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। তাছাড়া যুদ্ধবন্দিদের যুগপৎ স্বদেশ প্রেরণ একটি মানবিক সমস্যা। বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, পাকিস্তান এখনও বাস্তব সত্য অনুধাবনে ব্যর্থ হচ্ছে।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেন, স্বীকৃতির আগে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না। পররাষ্ট্রনীতির প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব—এ নীতির ভিত্তিতে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালিত হয়।

অদূর ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ব্যক্ত করে বঙ্গবন্ধু বলেন, আগামী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কৃষিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বঙ্গবন্ধু বলেন, আমাদের কৃষকরা কঠোর শ্রমের বিনিময়ে অধিক খাদ্য উৎপাদনে আগ্রহী। কৃষকরা বছরে তিনবার ফসল ফলাতে চায়। সাজসরঞ্জামের অভাবে আমাদের দেশের লোক খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে অধিক খাদ্য উৎপাদন করতে পারে না।

image0 (14)বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী তাদের ২৫ বছরের শাসনকালে আমাদের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়ে গেছে। ওরা পূর্ব পাকিস্তানকে তাদের পণ্যের বাজার হিসেবে ব্যবহার করেছে। দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পণের আগে ঘরবাড়ি, সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থা, খাদ্য গুদাম, ব্যবসা কেন্দ্র ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। তারা এখানে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা চালিয়েছে, নিরীহ নারী ধর্ষণ করা থেকে শুরু করে জনগণের ধন-সম্পদ লুটপাট করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধকালে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এক কোটি মানুষকে তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে। যুদ্ধের পর সরকারকে এক কোটি লোকের খাদ্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হয়েছে।

স্বাধীনতা যুদ্ধকালে দেশের মানুষকে খাদ্য-বস্ত্র ও আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করায় ভারতের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে পরিবার পরিকল্পনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

ভারত যৌথ প্রস্তাব প্রত্যাহার করবে না

ভারত-বাংলাদেশ যুক্ত বিবৃতিতে একইসঙ্গে যুদ্ধবন্দি ও বেসামরিক ব্যক্তিদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে পাকিস্তানের মনোভাব উৎসাহব্যঞ্জক না হওয়া সত্ত্বেও এ প্রস্তাব প্রত্যাহারের সম্ভাবনা অস্বীকার করেছে ভারত। পাকিস্তানকে একটি সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার জন্য এইচসি কাচওয়াই যে সুপারিশ করেন, তার বিরোধিতা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, অচলাবস্থা দূর করার জন্য সরকার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যুক্ত বিবৃতি ও ব্যাখ্যা করার জন্য পাকিস্তান ২০ এপ্রিল ভারতের কাছে যে পত্র দিয়েছে সে সম্পর্কে যৌথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আলোচনা চলছে। বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা শেষ হলে পাকিস্তানের কাছে জবাব পাঠানো হবে।