যৌথ ঘোষণা বিশ্ব পরিমণ্ডলে অভিনন্দিত

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৪ মে  ঘটনা।)

উপমহাদেশের মানবিক সমস্যাবলীর সমাধানের  উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ও ভারত সম্প্রতি পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী ছাড়া সকল যুদ্ধবন্দির বিষয়ে যে প্রস্তাব দিয়েছিল, বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদপত্র তাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাগত জানায়। তারা বলে যে, বাংলাদেশ ও ভারতের এই যৌথ প্রস্তাব উপমহাদেশের সকল অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য দারুণ পদক্ষেপ। লন্ডন টাইমস, অটোয়া জার্নাল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী সংবাদপত্রগুলো বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ ঘোষণার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে এবং এই অভিমত ব্যক্ত করে যে, উপমহাদেশে মানুষের সমস্যাগুলো সমাধান, উপমহাদেশের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এর চেয়ে ভালো উদ্যোগ আর হয় না।

কোনও কোনও পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো যদি  বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রস্তাব গ্রহণে ব্যর্থ হন, তাহলে তা হবে দুঃখজনক। পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সে দেশের বিরোধিতার কঠোর সমালোচনা করে টাইমসের সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে পাকিস্তানের নৃশংসতা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিবৃতিতে যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তার সত্যতা অস্বীকার পাকিস্তান করতে পারবে না।

সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শুধু তার দেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে নয়, বরং তিনি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে নিরপরাধ বাঙালিদের বিচারে প্রহসনের হুমকি দিচ্ছেন। লন্ডন টাইমসের ১৯৭৩ সালের ৩০ এপ্রিল সংখ্যার সম্পাদকীতে মন্তব্য করা হয়—  বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রস্তাব পাকিস্তান গ্রহণ করা উচিত। কারণ, এ প্রস্তাবটি একান্তভাবেই একটি গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব, যার মাধ্যমে পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী ছাড়া সকল যুদ্ধবন্দি মুক্তি পেতে পারে।

সংবাদপত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ কমান্ডের কাছে এখনও বন্দি ৯০ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যের মধ্যে মাত্র দুশ’ যুদ্ধাপরাধী ছাড়া বাকি সকলকেই মুক্তি দেওয়ার কথা প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে মনে হয়,   বাংলাদেশ ও ভারতের মনোভাবের প্রশংসনীয় পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ  প্রস্তাব কার্যকর হলে এবং সেইসঙ্গে পাকিস্তান যদি বাংলাদেশি বাস্তবতার স্বীকার না করে, তাহলে পাকিস্তানের যুদ্ধবন্দিদের এবং বাংলাদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী পাকিস্তানিদের প্রতিদিনকার খাওয়ানোর দায়িত্ব আর বাংলাদেশের থাকবে না।

৫ মে, ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত পত্রিকার প্রধান শিরোনামযুদ্ধাপরাধীদের তালিকা পেশ করা হয়নি

নয়াদিল্লি থেকে পরিবেশিত সংবাদে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্দেশ্যে এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিদের কোনও তালিকা পেশ করেনি। ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী সুরেন্দ্র পাল সিং রাজ্যসভায় কালী মুখার্জি ও অন্যদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

সমাজবিরোধী দমনের প্রশাসনযন্ত্র যথেষ্ট

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিল ঘোষণা করেন, যে কাউকে আইন-শৃঙ্খলা সহজে নষ্ট করতে দেওয়া হবে না। এনা প্রতিনিধির কাছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, ‘সমাজবিরোধী আইন ভঙ্গকারীদের মোকাবিলায় পর্যাপ্ত শক্তি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর রয়েছে।’ তিনি হুঁশিয়ার করে দেন যে, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, ‘দেশের শিল্প পরিমণ্ডলে শান্তি বজায় রাখার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সকল ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির নিশ্চয়তা এখন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। উৎপাদন ব্যাহত করার কোনও তৎপরতা বরদাস্ত করা হবে না।’

১৯৭৩ সালের ৫ মে প্রকাশিত বাংলাদেশ অবজারভারজরুরি ভিত্তিতে খাদ্যদ্রব্য পাঠানো প্রয়োজন

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চালের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির খবর পাওয়া যাচ্ছিল। সরকার বিভিন্ন অঞ্চলে জরুরিভিত্তিতে খাদ্যশস্য প্রেরণের ব্যবস্থা করতে চেষ্টা করে। যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সরকার সর্বত্রভাবে চেষ্টা করছিল— যাতে দেশের সব জায়গায় দ্রুত খাদ্যশস্য পৌঁছানো যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও চালের দাম কমছে না বলে সারা দেশ থেকে সংবাদদাতারা জানান। চালের সঙ্গে সঙ্গে কেরোসিন, চিনি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ছিল।

এদিন আন্তর্জাতিক রেডক্রস প্রতিনিধি জা অট গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পত্রিকাগুলোতে তাদের সাক্ষাতের ছবি প্রকাশ করা হয়।