৫ লাখ ডোজ টিকা আসছে ঈদের আগে

বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা আমদানির চেষ্টা করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে আগামী ১২ মে চীনের কাছ থেকে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা আসছে। এটা ছাড়া অন্য টিকা কবে আসবে সে ব্যাপারে এখনও কিছু জানে না সরকার। এছাড়া চীনের সঙ্গে টিকার দাম নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং রাশিয়ার সঙ্গে ক্রয় চুক্তি একতরফা বলে মনে করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর ফলে কিছুটা জটিলতা দেখা দিচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এসব তথ্য জানান।

তিনি বুধবার (৫ মে) সাংবাদিকদের বলেন, চীনের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন ১২ মে’র মধ্যে টিকা আসবে। চীনে ছুটির ঝামেলা চলছে। পাঁচ লাখের এই টিকা উপহার হিসেবে আসবে। কবে কখন কত টাকায় কতটুকু আনা হবে সেটি ঠিক করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া উপহার আসার পরে যে টিকা কেনা হবে সেটির দাম ঠিক করা হবে।

দরকষাকষি করে সব ঠিক করা হবে

রাশিয়ার সঙ্গে ক্রয় চুক্তি বিষয়ে তিনি বলেন, রাশিয়া কিছু ডকুমেন্ট পাঠিয়েছিল এবং আমাদের রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে বারবার তাগাদা দিচ্ছে। আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি এবং জেনেছি তার কাছে ডকুমেন্টগুলো অনেক পরে দেওয়া হয়েছে।

ডকুমেন্ট বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বলা হয়েছে ডকুমেন্টগুলো একতরফা। অর্থাৎ কত টাকায় রাশিয়া বিক্রি করবে বা কতটুকু পাঠাবে সেটি উল্লেখ আছে। আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বললাম, এটি রাশিয়ার ডকুমেন্ট এবং তারা তাদের কথাই লিখবে। উনি বললেন, যদি তারা চালান দিতে ব্যর্থ হয় তবে কী পেনাল্টি হবে সেটি লেখা নাই। আমি বললাম, পেনাল্টির কথা রাশিয়া কেন লিখবে, সেটি তো লিখবেন আপনি। আপনি যেগুলো চান সেগুলো কাউন্টার প্রস্তাব দেন। এটি দরকষাকষি করে ঠিক করা হবে। তবে একটি জিনিস মনে রাখবেন। এই ওষুধের বাজারে বিক্রেতারা এখন বেশি ক্ষমতা রাখে। কারণ, এটি সবাই তৈরি করে না। কাজেই যা বলবেন এবং করবেন বুঝে শুনে করবেন।

টিকা আনায় দেরি কেন হচ্ছে

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেরি করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের অনেক কিছু দেখতে হয়। প্রথম বিষয় হচ্ছে এটি যেন বাংলাদেশিদের স্বাস্থ্যের ওপর কোনও প্রভাব না ফেলে। দ্বিতীয়ত চুক্তি করলে সেটি আমাদের কী উপকারে আসবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রথম থেকেই অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছি এই টিকা নিয়ে। তখন একটি বিষয় ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন না হলে টিকা আনা যাবে না এবং এটি আমাদের না, পণ্ডিতদের সিদ্ধান্ত। আমরা পণ্ডিতদের সিদ্ধান্ত ফেলে দিতে পারি না।

এখন বিশেষজ্ঞদের দ্রুত কাজ করা উচিত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তাড়াহুড়োর মধ্যে আছি, তারা নাই। তবে তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন।

যৌথ উৎপাদনের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ 

বাংলাদেশ যৌথভাবে করোনার টিকা উৎপাদনের চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এরমধ্যে রাশিয়ার মনে হয় উৎপাদন করার ক্ষমতা কম। আমাদের দেশে উৎপাদন ক্ষমতা আছে। এটি নিয়ে আলোচনা চলছে। আমাদের বাজার অনেক বড় এবং এখানে উৎপাদন করা গেলে সাশ্রয় হবে। প্রধানমন্ত্রী প্রথম থেকে দাবি করছেন টিকা পাবলিক পণ্য হওয়া উচিত। এর প্রযুক্তি সব দেশের কাছে থাকা উচিত এবং এটি কুক্ষিগত করে রাখা ঠিক হবে না।

সেরাম থেকে টিকা আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ভারত থেকে সরে আসিনি এবং তারাও বলে নাই যে তারা দেবে না। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা কয়েক দিন আগে লিখেছি যে এখন আমাদের তিন মিলিয়ন দরকার এবং সেটি আগে আগে দেওয়ার জন্য।

বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আনার চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইউরোপের কয়েকটি দেশের কাছে এই টিকা আছে। কিন্তু তারা ব্যবহার করছে না। আমরা ওইসব দেশে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু ওখানে মোট পরিমাণ অত্যন্ত কম। কোনোখানে ২০ হাজার বা সেই ধরনের। সবচেয়ে বেশি আছে দুই লাখ, যা আমাদের একদিনের চাহিদার সমান। এছাড়া আরও দেশ আছে, তারাও চাইছে। সে কারণে সম্ভাবনা তেমন বেশি না।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা পাওয়ার আশা

মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা পাওয়ার আশা করছি। কারণ, তারা ছয় কোটি টিকা বিভিন্ন দেশকে দেবে বলেছে। আমাদের রাষ্ট্রদূত স্টেট ডিপার্টমেন্টে গিয়ে দেখাও করেছেন। আমাদের অনুরোধ তারা বিবেচনা করছেন। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে দেখা করবেন সর্বশেষ পরিস্থিতি জানানোর জন্য। তবে কখন কবে পাবো জানি না।

যুক্তরাষ্ট্র ভারত ও ব্রাজিলকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় ডায়াসপোরা অনেক জোর করছে সব টিকা ভারতে পাঠানোর জন্য বলে তিনি জানান।