টিএসসিতে চা চক্রে বঙ্গবন্ধু

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৪ মের  ঘটনা।)

১৯৭৩ সালের ১৪ মে বিকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) আয়োজিত এক চা চক্রে যোগ দেন। তৃতীয় ইতিহাস সম্মেলন উপলক্ষে আগত প্রতিনিধিদের সম্মানে এই চা চক্রের আয়োজন করা হয়েছিল। বাসসের খবরে বলা হয় চা-চক্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য এম এ মতিন চৌধুরী, ড. এনামুল হকসহ শিক্ষক ও সাহিত্যিকরা যোগদান করেন।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এক হাজার মজুরের প্রাণরক্ষা

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল প্রচেষ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রামের গভীর জঙ্গলে আটকে পড়া কর্ণফুলী কাগজ কলের এক হাজার কর্মীর জীবন রক্ষা পায়। ১৯৭৩ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে অনাহারে ছিলেন তারা। হেলিকপ্টারযোগে তাদের খাদ্যপাঠানো হয়। কর্ণফুলী কাগজ কলের জন্য বাঁশ কাটার উদ্দেশে এসব কর্মীরা চন্দ্রঘোনা থেকে প্রায় ১৬০ মাইল দূরে একটি অঞ্চলে গভীর জঙ্গলে যায়। সে সময় প্রবল বর্ষণে কাঁচা বাঁশের তৈরি ঘরের চাল ভেঙে পড়ে  প্রায় ৬৫ মাইল নদী পথ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে লালু-কালুর যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর তাতেই কাগজ কলের এক হাজার কর্মী অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ও ১০ জন গুরুতর অসুস্থ হন। কর্ণফুলী কাগজ আবাসিক পরিচালক পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বঙ্গবন্ধু তা জানতে পারেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে হেলিকপ্টারে খাদ্য পাঠানোর নির্দেশ দেন।

image0 (21)সততায় মুগ্ধ বঙ্গবন্ধু

আইজুদ্দিন শেখ নামে এক ব্যক্তি এইদিনে গণভবনে বঙ্গবন্ধুর হাতে দুই হাজার টাকা ফেরত দিতে হাজির হন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার হিসেবে তার নামে বরাদ্দ হয়েছিল এই টাকা। ওই ব্যক্তির দাবি, প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে টাকা পাঠানো হয়। কিন্তু তার ছেলে মোহাম্মদ সেলিম শেখ শহীদ হননি। রণক্ষেত্র থেকে বিজয়ীর বেশে তিনি ফিরে এসেছেন। তাই এ টাকা নেওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না। আইজুদ্দিন শেখের এই সততায় বঙ্গবন্ধু মুগ্ধ হন। তিনি টাকা ফেরত দিলে বঙ্গবন্ধু আবার সে টাকা তাকে দান করেন। আইজুদ্দিন বরিশাল জেলার মুলাদী থানার অধিবাসী।

সমাজবিরোধীদের রেহাই নেই

চোরাচালানি গুদামজাতকারী ও সমাজবিরোধীদের শায়েস্তা করতে সরকার তৎপরতা আরও জোরদার করে। জনসাধারণের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে এসব সমাজবিরোধীরা খেলছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিল । তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মাটি থেকে সমাজবিরোধীদের নির্মূল করে দেওয়া হবে।  সরকারের দৃঢ় মনোভাব কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন এসব সমাজবিরোধীরা শাস্তি এড়াতে পারবে না।

আটক বাঙালিদের সম্পর্কে নীরবতা

ইরান এইদিনে যুদ্ধবন্দীদের প্রশ্নে পাকিস্তানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রদান করে কিন্তু আটক বাঙালি এবং ভারত বাংলাদেশ যুদ্ধ ঘোষণা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নীরবতা অবলম্বন করে। প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর প্রস্তাবিত যুদ্ধবন্দিদের মুক্তির জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। আশা প্রকাশ করা হয়, ঢাকা প্রশাসন যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকে বিরত থাকবে।