‘করোনা বলে কোনও রোগ নেই’

করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রচণ্ড কষ্ট নিয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। আইসিইউতে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। বেডে বসে তিনি দৃঢ় বিশ্বাসে বলেন, ‘করোনা বলে কোনও রোগ আসলে নেই।’ করোনা আক্রান্ত এই ব্যক্তিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

এদিকে, ঈদের দিন শুক্রবার (১৪ মে) সকালে সোবাহানবাগ মসজিদের সামনে এক জায়গায় বসে আছে অনেক নিম্নবিত্ত মানুষ। মসজিদ থেকে বের হয়ে খুশি মনে কেউ যদি কিছু দেয় সেই প্রতীক্ষায়। সামনে শিশুরা খেলছে। করোনার সময় এভাবে কাছাকাছি বসে গল্প না করে একটু দূরে বসেন খালা বলতেই এক নারীর হাসি যেন থামছেই না। কেন হাসছেন জানতে চাইলে তিনি হাসতে হাসতেই বলেন, ‘শোনেন করোনা আসলে ভয় দেখানোর জন্য। এই নামে কোনও রোগ নেই। থাকলে আমাদের আগে বড়লোকে মরতো না।’

দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। ২০২০ সালে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পরে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১২ হাজার ৭৬ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮৭ জন। এরপরেও এখনও একটা অংশ মনে করে ‘করোনা বলে কোনও রোগ নেই’। তারা বেঁধে দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মানতে চান না এবং এই রোগ নিয়ে শঙ্কিত হতে দেখলে হাসাহাসি করেন।

কেন বৈশ্বিক একটা মহামারিকে মানুষ অস্বীকার করছে জানতে চাইলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাধারণত তিন কারণে ব্যক্তি এ ধরনের আচরণ করে থাকে। এক. এটা এক ধরনের ডিফেন্স মেকানিজম। মানুষ প্রকৃত পরিস্থিতি অস্বীকার করতে চায়। সে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানে কিন্তু অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে নিজেকে সাহস দিতে চায়। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তি নানা ধরনের অপপ্রচার, বিভ্রান্তমূলক তথ্য দেখে সে নিজের সুবিধামতো একটা ধারণা করে নিয়ে নিজের মতামত দিতে চায়। আর সবচেয়ে ‍গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, সাধারণ শিক্ষার অভাব। বহু আগে যখন কলেরা মহামারি আকার ধারণ করে তখন গ্রামের পর গ্রাম মানুষ টিকা নেওয়ার ভয়ে পালিয়ে থাকতো। এই মাস্ক পরার শিক্ষার জন্য পুলিশ কেন লাগবে? যেকোনও রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা নাগরিককে মেনে চলতে হবে এই শিক্ষা তো কোনও ডিগ্রিধারীর শিক্ষা না, সাধারণ শিক্ষা। এই তিনের অভাবের কারণে মানুষ এখনও “করোনা বলে কোনও রোগ নেই”- এ ধরনের মন্তব্য অবলীলায় করছে।’