গণভবনে যাননি বঙ্গবন্ধু, তিন দফা দাবিতে ভাসানীর অনশন

বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২১ মের ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এইদিন গণভবন অথবা সচিবালয় যাননি। তিনি সারা দিন তার ধানমন্ডির বাসভবনে অবস্থান করেন। এদিন সারা দেশে হরতাল ছিল।

আমরণ অনশনরত জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর তিন দফা দাবির সমর্থনে ঢাকাসহ সারা দেশে হরতাল পালিত হয়। রাজধানী ঢাকায় কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া সারা দেশে হরতাল শান্তিপূর্ণ ছিল। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ কয়েকজন আহতের খবর পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ বিমানের কর্মচারী নূর হোসেনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ বিমান কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩ জনকে আহত অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে, বাকি ১০ জন চিকিৎসা নিয়ে চলে যান।

image2 (21)এশীয় শান্তি সম্মেলন

১৯৭৩ সালে ২৩ মে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে এশীয় শান্তি সম্মেলন শুরু হবে। এই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি পদকে ভূষিত করা হবে। এ শান্তি সম্মেলনে যোগদানের জন্য ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া ও কানাডা থেকে প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসেছে। সোভিয়েত প্রতিনিধি দলসহ অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপতিরা ঢাকায় এসে পৌঁছাবেন এরইমধ্যে।

শান্তি সম্মেলনের প্রথম দিনের অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও কুরি পদকে ভূষিত করা হবে। উল্লেখযোগ্য যে গত বছরের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকে এ পদক প্রদানের কথা ঘোষণা করা হয়। বিশ্ব শান্তি পরিষদের সর্বোচ্চ সম্মান এই পদক। বিশ্বে শান্তি ও স্বাধীনতায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এ পদক দেওয়া হয়ে থাকে।

আন্তর্জাতিক চক্রান্ত রুখে দাঁড়ান

একটি রাজনৈতিক দলের শ্রমিক ও ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এইদিন রাতে এক যুক্ত বিবৃতিতে দেশের জনগণের প্রতি সম্মিলিতভাবে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত প্রতিহত করে আসন্ন এশীয় সম্মেলনকে সর্বতোভাবে সফল করার আহ্বান জানান। শত্রুদের মুখোশ উন্মোচন করে তাদের ষড়যন্ত্র দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে তাদের সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করে পরাজিত করার জন্য নেতারা জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে সর্বশক্তি দিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

এইদিন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম, যুবলীগের প্রেসিডিয়ামের সভাপতি শেখ ফজলুল হক মনিসহ অনেকে।

বিবৃতিতে বলা হয়, হরতালকারীরা দাবি-দাওয়ার তালিকা থেকে জনগণের খাদ্য-বস্ত্রের সংগ্রামের কথাগুলো বাদ দিয়ে শান্তি সম্মেলন করার জন্য জোর আওয়াজ তুলে হরতালের নামে ভিয়েতনাম মঞ্চ ধ্বংস করে প্রমাণ করেছে যে তারা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ক্রীড়নক হিসেবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

অভিজ্ঞতা ও মতামত বিনিময়ে উপকৃত হবে

ভারতের পরিকল্পনা মন্ত্রী শ্রীধর এদিন বিকালে ঢাকায় পৌঁছানোর পরে দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র নিরূপণের উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ড. নজরুল ইসলামের সঙ্গে আলোচনার সূত্রপাত করেন। এর আগে শ্রীধর বিকালে ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছে সাংবাদিকদের বলেন, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে পরিকল্পনা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা ও মতবিনিময়ে উভয় দেশ উপকৃত হবে। বৈঠকে বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনের সচিব ও সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।

image1 (23)ভাসানীকে দেখতে গেলেন রাষ্ট্রপতি

অনশনরত ভাসানীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তাকে ৯ নম্বর কেবিনে ভর্তি করা হয়। ১৫ মে থেকে তিনি মতিঝিলে দলীয় কার্যালয়ে তিন দফা দাবিতে অনশন শুরু করেন। রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এদিন হাসপাতালে তাকে দেখতে যান এবং অনশন পরিত্যাগ করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ জানান।