বঙ্গবন্ধুকে আটকে পড়া বাঙালি নারীর চিঠি

করাচিতে আটকে পড়া এক অসহায় বাঙালি নারীর চিঠি এসে পৌঁছায় ঢাকায়। চিঠিতে লেখা- আমার ছোট ছোট বাচ্চা আছে। আমার বাড়ির চারপাশে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াচ্ছে শকুন আর হায়েনার দল। এরই মধ্যে বাসায় আকস্মিক হামলা চালানো হয়। হামলাকালে এখানে অধিকাংশ বাঙালি পুরুষের সঙ্গে আমার স্বামীকেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এক নিদারুণ অবস্থার মধ্যে আটক রাখা হয়েছে বন্দিশিবিরে।

করাচি থেকে বাঙালি নারী যে চিঠি পাঠান, ওপরের কথাগুলো সেই চিঠির একটি অনুচ্ছেদ। তিনি লিখেছেন, হঠাৎ করেই একদিন তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং তার প্রিয়জনকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল। এনার খবরে প্রকাশ, সেই নারী তার চিঠিটি লন্ডন হয়ে বহু কষ্টে দেশে পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার আত্মীয়-স্বজনের কাছে লেখা চিঠিতে তিনি পরিস্থিতি ব্যক্ত করেন। যেখানে ছিল দুর্দশা, সীমাহীন মানসিক উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার কথা।

চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘বঙ্গবন্ধু, আমি আপনার নিকট, আমার সোনার বাংলার ভাইবোনের কাছে, ভারতের জনগণের কাছে ও নির্বাক বিশ্ব বিবেকের কাছে প্রার্থনা জানাচ্ছি- আমরা যাতে ফিরে যেতে পারি তার জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিন। আর তা যদি না পারেন আপনাকে বলে দিন কেমন করে মরবো আমরা। এই অসহায় অবস্থা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আপনাদের নির্দেশিত পথে মৃত্যুকে আলিঙ্গন জানাবো আমরা।’image1 (28)

ভুট্টোর জবাবে ঢাকা-দিল্লি কঠোর হবে

যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিনিধির কাছে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টো যা বলেছেন তা ঢাকার কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে মহলকে হতাশ করেছে। বাসসের খবরে প্রকাশ, নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার প্রতিনিধির কাছে ভুট্টো বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হলে তিনি বাঙালিদের বিচার করবেন। তার নাকি বিচার ছাড়া আর পথ খোলা নেই। কিন্তু যাদের তিনি বিচার করতে যাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ এবং কতজনের বিচার করা হবে সে সম্পর্কে ভুট্টোর স্পষ্ট কোনও জবাব নেই।

পর্যবেক্ষকরা বলেন, অথচ এর আগে একবার ভুট্টো বলেছিলেন, যুদ্ধাপরাধের জন্য বাংলাদেশে বন্দি কয়েক শ’ পাকিস্তানের সামরিক অফিসারের বিচার করে অন্যান্যদের ছেড়ে দেওয়া হলে তাতে তার আপত্তি নেই। এটা স্পষ্ট যে এখন তিনি তার সেনাবাহিনীর চাপে সেই মত পরিবর্তন করেছেন। পর্যবেক্ষকদের মতে ভুট্টো শেষ মন্তব্যটাই প্রমাণ করে যে পাকিস্তানের যুদ্ধবাজ সামরিক ও সামন্তবাদী শক্তি তাকে চালিয়ে নিচ্ছে। আরও প্রমাণ করে যে দেশের অভ্যন্তরে ভুট্টো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের প্রস্তাবে অনুকূল সাড়া দিচ্ছেন না।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিনিধিকে ভুট্টো বলেন, বাংলাদেশ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কটু প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে। তাদের জন্য এটা হবে খুবই অসহনীয়। বাঙালিদের প্রতি তার অভিযোগ কী হবে সেই জবাবে ভুট্টো বলেন, আমরা জানি যুদ্ধতে বাঙালিরা তথ্য সরবরাহ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে, বিচার হবে। ভুট্টোর অভিযোগ বাংলাদেশে অবস্থিত অবাঙালিরা উপমহাদেশে শান্তির পথে একটি বড় বাধা। এদের কতজনকে তিনি ফেরত নেবেন সেই কথাটা বলতে তিনি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন অস্ট্রেলিয়া, কানাডা যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের উচিত তাদের গ্রহণ করা। অনেকেই ভারতের বিহার রাজ্য থেকে বাংলাদেশে এসেছে। আমরা এক হাজার মাইল দূরে। তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কো্নও দায়িত্ব আমাদের নেই।

এমন পরিস্থিতিতে দিল্লির পর্যবেক্ষক মহল বলছে, ভুট্টো দেখাতে চান যে দেশে তিনি খুব বিপদে আছেন। তাই বিশ্বের তার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া দরকার। কিন্তু ধাপ্পা দিয়ে তিনি বিশ্বকে বোকা বানাতে পারবেন না বলে মত প্রকাশ করেন তারা।