আদালতের বাইরে দেউলিয়া ঘোষণায় নতুন আইন

‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২১’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সোমবার (৩১ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল সভায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আইনটির খসড়া উপস্থাপন করলে তা অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

নতুন আইনে ব্যাংকিং কার্যক্রম করে না (নন-ব্যাংকিং) এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে আদালতের বাইরে গিয়ে কীভাবে দেউলিয়া ঘোষণা করা যায়, তার উপায় খুঁজছে সরকার। উপায় খুঁজে বের করে তা খসড়া ‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২১’ এ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

তিনি জানান, ১৯৯৩ সালের ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনাল অ্যাক্ট অনুযায়ী এতদিন চলছিল নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। সেখানে নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষকে আকর্ষণ করতে ১৫/১৬ শতাংশ সুদ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। সেই ঘোষণার লোভে পড়ে মানুষ সর্বস্ব হারায়। এ সব কারণেই সেটিকে পরিবর্তন করে এই নতুন আইনটি করা হচ্ছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যদি কেউ দেউলিয়া হয়ে যান বাংলাদেশ ব্যাংক কীভাবে গ্রাহকদের পাওনা বুঝিয়ে দেবে— সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে ডিপোজিটের ব্যবস্থা থাকবে। দেউলিয়া করার বিষয়টি বর্তমান আইন অনুযায়ী হাইকোর্টে যেতে হয়। মন্ত্রিসভা পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, কোর্টের বাইরে এটি ফয়সালা করা যায় কিনা। এতে অনেক সময় বা ভোগান্তি কমে যাবে। কোর্টে গেলে দীর্ঘদিন মামলা চলবে। এরপর হাইকোর্টে যেতে হয়। আপিল বিভাগে গেলে আবার রিভিউ করতে হবে। নতুন আইন হলে একটা যুগান্তকারী দিক হবে। যদি দেউলিয়ার বিষয়টি কোর্টের বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কারও মাধ্যমে  সুরাহা করা যায়, যারা খসড়া দেখবেন তারা বিষয়টি দেখবেন।’

আইনে নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর নানান অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার পাশাপাশি ফৌজদারি আইনেও বিচার চলবে। সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত জেল হবে বলেও জানান তিনি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এখন থেকে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে কত টাকা বিনিয়োগ করা যাবে? কত শতাংশ সুদ দেওয়া যাবে? সেসব বিষয়ে সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া যায় কিনা তা দেখা হচ্ছে। এতে সর্বোচ্চ কত টাকা জমা রাখতে পারবে, সুদের হার কত হবে, সেগুলো থাকবে,  মানুষ যেন সবকিছু বুঝেশুনে টাকা বিনিয়োগ করতে পারে।’

সচিব জানান, কারা কারা ঋণখেলাপী হতে পারবে তা আইনে বলে হয়েছে। আগের আইন অনুযায়ী যে প্রতিষ্ঠানগুলো আগে ইনস্টিটিউট হিসেবে বিবেচিত হতো, এখন তারা কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত হবে। এজন্য নতুন করে সেগুলোকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে না। মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়েও  কোনও পরিবর্তন আনতে হবে না।

খসড়া আইন অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্স কোম্পানি লাইসেন্স ছাড়া বাংলাদেশে কোনও অর্থায়ন ও ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।