প্রতিশোধ নয়, মানবতার খাতিরে বিচার হবে: বঙ্গবন্ধু

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৯ জুনের ঘটনা।)

‘প্রতিশোধের খাতিরে নয়, মানবতার খাতিরে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার হবে। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ভোলা যায় না।’ নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিনিধির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ কথা বলেন। তিনি বলেন, শিগগিরই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। তিনি আরও বলেন গণহত্যার নীতির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেছে যারা, পাকিস্তানের সেসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অবশ্যই হবে।

সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেন, পাকিস্তান সরকার উপমহাদেশের বাস্তবতাকে মেনে নিতে অস্বীকার করছে। বাংলাদেশের বাস্তবতাকে দেখতে না চাওয়া পাকিস্তানের একটি প্রধান সমস্যা। পাকিস্তান আমাদের স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু অন্য এক শ’টা দেশ দিয়েছে। তাদের (পাকিস্তানের) স্বীকৃতির পরোয়া করি না। তারা যদি বাস্তবতা মেনে না নেয়, তারা যদি এখনও বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অংশ মনে করে, করুক। তারা বোকার স্বর্গে বাস করে। বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, আমি শুধু চাই এই উপমহাদেশ একটি শান্তির এলাকা হোক। সেটাই আমাদের পররাষ্ট্রনীতি।

image1 (33)প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নোয়াখালীতে তদন্তে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিলকে নোয়াখালী গিয়ে সেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল ও ঘটে যাওয়া ঘটনা ব্যক্তিগতভাবে সরেজমিন তদন্ত করার নির্দেশ দেন। এ খবরে বলা হয় আব্দুল মালেক উকিল পরদিন সকালে ঢাকা থেকে রক্ষীবাহিনীর পরিচালককে সঙ্গে নিয়ে নোয়াখালী রওনা হন।

সরাসরি বগুড়া ও রংপুরে সফর শেষে এইদিন ঢাকায় ফেরেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গণভবনে দেখা করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহত ব্যক্তিদের তার পক্ষ থেকে শুভকামনা জানানোর অনুরোধ করেন এবং নোয়াখালীর শান্তিপ্রিয় জনসাধারণের প্রতি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন জানান। বঙ্গবন্ধু আশ্বাস দেন, প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে পর্যাপ্ত শাস্তি দেওয়া হবে।

image1 (33)

বিচার হবে

পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় আইন তৈরির কাজ দ্রুত এগোচ্ছে। যেকোনও সময়ে আইনটি বিল আকারে সংসদে পেশ হতে পারে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র আভাস দেয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংস্থার প্রতিবেদনের সঙ্গে আলোচনায় বলেন, পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলেও বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে।

বাংলাদেশ-ভারত যুক্ত ঘোষণার পর পাকিস্তানের ওপর মার্কিন চাপ কিছুটা বেড়েছে বলে তার ধারণা। অবাঙালিদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানের বক্তব্য অস্পষ্ট বলেও উল্লেখ করেন তিনি। চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন আমরা সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাব্য সুযোগ গ্রহণ করার জন্য সবসময় তৈরি।

বিদেশি শক্তি বিভেদ সৃষ্টির জন্য সক্রিয় রয়েছে বলে যে কথা শোনা যাচ্ছে সে সম্পর্কে তিনি বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনে যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয় তাতে বিভেদ সৃষ্টির জন্য স্বার্থবাদী মহল সব দেশে সব সময় চেষ্টা করে। স্বাধীনতার পর জাতীয় সংহতির আগে এশিয়া ও আফ্রিকার সব দেশেই এ ধরনের বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে এবং হচ্ছে।

image3 (12)খাদ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক আশাবাদ

বাংলাদেশের জাতিসংঘের ত্রাণ কর্মসূচি সমন্বয়কারী রবার্ট বাংলাদেশের সামগ্রিক খাদ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক আশাবাদ প্রকাশ করেন। স্যার রবার্ট সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, আমরা দুটো বিষয়ে আশাবাদী। প্রথমত কয়েকদিন পূর্বে বাংলাদেশে বর্ষা শুরু হয়েছে এবং বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তিনি বলেন এ ধরনের বৃষ্টিপাত কাম্য ছিল। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশি খোলাবাজারে চালের দাম কমেছে। এতে করে মজুতদাররা বাজারে চাল ছেড়ে দিচ্ছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, বছরে ৩০ লক্ষ টন খাদ্যের প্রয়োজন হবে বলে হিসাব করা হয়েছে।